ফের উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে বলে রোববার (৩ আগস্ট) ভিসেরা রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ইবি ক্যাম্পাস। সাজিদ হত্যাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে তারা ক্যাম্পাস শাটডাউন করবেন এবং সোমবার প্রশাসন ভবন অবরোধ করবেন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘খুন কেন আমার ভাই, খুনিদের রক্ষা নাই’, ‘রশি লাগলে রশি নে, খুনিদের ফাঁসি দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে শাখা ছাত্রদলের সদস্য নূর উদ্দিন, ছাত্রশিবিরের ছাত্র অধিকার ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকারিয়া, আন্তর্জাতিক ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক হাসানুল বান্না অলি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল রাহাত ও আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদ আব্দুল্লাহকে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। এই প্রশাসন যদি সুষ্ঠু তদন্তে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা নিজেদের পঙ্গু প্রশাসন হিসেবেই প্রমাণ করবে। এই ঘটনার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। প্রশাসন টালবাহানা করছে। আমরা চাই অবিলম্বে পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত হোক এবং প্রশাসন নিজ উদ্যোগে হত্যা মামলা দায়ের করুক। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আর যেন কোনো সাজিদ প্রাণ না হারায় তা প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রদল নেতা নূর উদ্দিন বলেন, সাজিদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১৭ তারিখ থেকে আমরা রাজপথে ছিলাম। যদি পিবিআই কিংবা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকারীদের ধরা না হয়, তাহলে ক্যাম্পাসকে শাটডাউন করে দেওয়া হবে। আমাদের প্রশাসন বারবার আশ্বস্ত করেছে তারা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো তদন্তের রিপোর্ট পাইনি। এখনো সাজিদের হত্যাকারী কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চায়, প্রশাসনকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
শিবির নেতা জাকারিয়া বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই সাজিদকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সাজিদের মায়ের চোখের পানি যারা ঝরিয়েছে অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা সাজিদ হত্যার বিচার এবং সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে সাজিদের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি কমিটি করা হয়। এরপর কয়েক দফায় মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে ২১ জুলাই প্রকাশিত ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে মৃত্যুর আনুমানিক সময় উল্লেখ থাকলেও মৃত্যুর ধরন ও কারণ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি। ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য। ৩ আগস্ট ভিসেরা রিপোর্টে সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী মেডিকেল অফিসারও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আমার বার্তা/এল/এমই