ঢাবি সিনেট সদস্য

শুধু হল নয়, পুরো ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

শুধু আবাসিক হলগুলোতে নয়, পুরো ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেটে সরকার মনোনীত শিক্ষাবিদ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

শনিবার (০৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মতামত তুলে ধরেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লেখেন, আবাসিক হল শুধু নয়, পুরো ক্যাম্পাসে গুপ্ত, লুপ্ত, সুপ্ত, বিলুপ্ত সকল প্রকার দলীয় ছাত্র কিংবা শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। অথচ আমরা কী দেখছি? রঙের আবরণে দলীয় শিক্ষক রাজনীতি পুরোদমে চলছে। আমরা চাই ক্যাম্পাস হবে মুক্ত চিন্তার চারণ ভূমি।

‘ছাত্ররা যদি দলীয় রাজনীতি পরিহার করে তার অনেক অনেক সুফল আছে। হলে টর্চার সেল থাকবে না। অন্যতম একটি সুবিধা হলো হল পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজন হবে না। কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ছাত্ররাই পার্ট-টাইম চাকরি হিসেবে আবাসিক হলগুলো পরিচালনা করতে পারে। শুধু আবাসিক হল কেন ছাত্ররা রেজিস্ট্রার ভবন, লাইব্রেরি প্রভৃতি জায়গাতেও পার্টটাইম চাকরি করতে পারবে। এটাই সারা পৃথিবীর স্বাভাবিক ক্যাম্পাসের চিত্র। এর মাধ্যমে ছাত্ররা দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব ইত্যাদি শিখবে।’

পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, শিক্ষকরা কেন আবাসিক হল চালাবেন? একজন শিক্ষক কী করে হোটেল ম্যানেজার হন? এই যে রেজিস্ট্রার ভবনের নামে একটা কলঙ্কের তিলক যে ‘লাঞ্চের পরে আসবেন’- এটা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো যদি ছাত্ররা এখানে পার্ট টাইম কাজ করতে পারে। গোটা পরিবেশই পাল্টে যাবে। এছাড়া ছাত্র সংসদতো থাকবেই। এই ছাত্র সংসদই হবে নেতৃত্ব শেখার আসল জায়গা। তারা আবাসিক থেকে শুরু করে সর্বত্র শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ইতিবাচক কাজ করবে, সেবামূলক নানান কর্মসূচি থেকে শুরু করে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনাতেও নেতৃত্ব দেবে।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লেখেন, আবাসিক হলে দলীয় রাজনীতি থাকলে বিবাদমান নানান রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা নানা কারণে ঝগড়া ও মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার আশংকা সব সময়ই থাকবে। ছাত্র-শিক্ষক সবাই রাজনৈতিকভাবে সজাগ থাকবে, রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে। এসব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, বিতর্ক থাকবে কিন্তু কোনোভাবেই সরাসরি দলীয় রাজনীতি থাকা উচিত না। ২৪-এর অভ্যুথানের একটা অন্যতম চাওয়া ছিল এটাই।

তিনি আরও লেখেন, গতকাল বাংলাদেশ থেকে এক ছাত্র আমেরিকায় প্রথম গিয়ে কী পার্থক্য দেখলো, তা বর্ণনা করছিল। সে লিখেছে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সবচেয়ে লক্ষণীয় যেটা দেখলো তা হলো আবাসিক হলতো বটেই এমনকি পুরো ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির ডামাডোল নেই। সবাই ব্যস্ত লেখাপড়া, গবেষণা এবং নানান এক্সট্রা কারিকুলাম- যার মধ্যে আছে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক নানান অনুষ্ঠান। সেখানে হল চালায় ছাত্ররা। ছাত্ররা পার্ট টাইম ক্যাম্পাসের নানান জায়গায় কাজ করে উপার্জন করে। আমরা কেন পারবো না? রাজনীতি করে আমরা পুরো পরিবেশকে বিষাক্ত করে ফেলছি। এতটাই বিষাক্ত যে সেখানে লেখাপড়া ও গবেষণার কোনো পরিবেশই থাকে না।

সদ্য শিক্ষাবিদ সদস্য মনোনীত হওয়া এ অধ্যাপক লেখেন, রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে তো বাধা নেই? অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তো কোনো বাধা নেই। এইসব করতে তো দলীয় রাজনীতি করার দরকার হয় না। বরং দলীয় রাজনীতি ছাত্রদের সংকীর্ণ মনের হতে শেখায়। শুধু দলীয় রাজনীতির কারণে সরকার শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কমালেও সরকারদলীয় ছাত্ররা আনন্দ মিছিল করে। কল্পনা করা যায়? সাধারণ ছাত্ররা কি দলীয় রাজনীতি চায়? দেশের সাধারণ মানুষ বা ছাত্রদের অভিবাবকরা কি দলীয় ছাত্র কিংবা শিক্ষক রাজনীতি চায়?


আমার বার্তা/জেএইচ