রাজধানীতে ঘণ্টায় এক তালাক

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৪, ১৮:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

  কমল চৌধুরী:

রাজধানীতে প্রতি ঘণ্টায় একটি  তালাক হচ্ছে ও বিয়ে-বিচ্ছেদ দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় সমাজ হিমশিম খাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বেশি তালাক হচ্ছে ঢাকা শহরে। ঢাকায় প্রতি ঘণ্টায় একটি করে তালাক হচ্ছে। ঢাকার অভিজাত অঞ্চল খ্যাত সিটি করপোরেশনের উত্তর অংশে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ অংশে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। দুই সিটি করপোরেশনে গড়ে আপস হচ্ছে ৫ শতাংশের ও কম।

পারিবারিক সম্পর্ক, বিশেষত বিয়েও সংসারের ভাঙন নিয়ে বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। এতে বলা হচ্ছে, গত এক দশকে বদলে গেছে তালাকের ধরন। আগে ৭০ শতাংশ তালাকের ঘটনা ঘটত স্বামী কর্তৃক। কিন্তু এখন ৮০ শতাংশ তালাকের ঘটনা ঘটছে স্ত্রী কর্তৃক। এই এক দশকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। আর সঙ্গীদের থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা বেড়েছে তিনগুণ। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই প্রায় অভিন্ন চিত্র। নারীর ফেসবুক প্রীতির কারণেও বিচ্ছেদের হার বাড়ছে।

গবেষণা বলছে, তালাকের সবচেয়ে বড় কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘বনিবনা না হওয়া’। তবে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরুষও নারীদের উল্লেখ করা কারণের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। নারীদের উল্লেখ করা কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ স্বামীর সন্দেহ বাতিক মনোভাব, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, যৌতুক, দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে না আসা, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত ও নৈতিকতার সংকটসহ বিভিন্ন কারণ। আর স্বামীর অবাধ্য হওয়া, ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, ফেসবুকে আসক্তি,  স্ত্রী চাকরি করে স্বাধীনভাবে চলতে চাওয়া, পরপুরুষে আসক্তি, সন্তান না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিচ্ছেদ চাইছেন পুরুষরা।

গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজ নানামুখী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের উপর এর প্রভাব আরো গভীর ভাবে পর্যালোচনা হওয়া দরকার। অর্থনীতির  সাম্প্রতিক  বিকাশই  নির্দেশ করে নারীরা এখন ঘর থেকে আরো বেশি বেরিয়ে আসবে। পরিবারে যার ছাপ না পড়ে পারেনা। নারীরা বিচ্ছেদ বেশি চাইছেন। এটি সমাজে নারী ক্ষমতায়নের চিত্রকেই প্রতিফলিত করে। নিপীড়নমূলক পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক বন্ধন যে ক্রমে আলগা হয়ে যাচ্ছে, এটি ইতিবাচক। এতে গেল গেল রব উঠার কিছু নেই। নারিরা বর্তমানে অধিক স্বাধীনতা প্রিয় হয়ে উঠছে। এরকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই সব সমাজকেই যেতে হয়। তবে বিয়ে বিচ্ছেদ বা সংসারে ভাঙনের হার বেশি হওয়াটা এটিও  নির্দেশ করে যে সমাজে নারি ও পুরুষের মধ্যকার আস্থা, স্থিতিশীলতা লোপ পাচ্ছে। এটি সমাজ ও সভ্যতার জন্য কোনো সুখবর নয়। নারি ও পুরুষের মধ্যে ব্যবধান যত বাড়বে সভ্যতার টেকসই উন্নয়ন ততবেশি হুমকির মুখে পড়বে। রাষ্ট্রের তাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই নারী ও পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিকতর যত্নশীল হতে হবে। কেবল এই প্রক্রিয়াতেই সম্ভব সামাজিক এক মেরুকরণ প্রতিহত করে সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ও লৈঙ্গিক ভারসাম্য রক্ষা করা। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ও বিয়ে বিচ্ছেদের হার বাড়ছে। তবে জেলা-উপজেলা শহরে এর হার অনেক কম। বিয়ে বিচ্ছেদের ফলে দিন দিন সমাজে খুন, জখম ও অন্যান্য অপরাধের মাত্রাও ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর নারী ও পুরুষ উভয়েই বেপরোয়া জীবন যাপনে বহুলাংশেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তালাক রোধে ঢাকা শহরে এবং সারা দেশের বিভাগীয় শহরে  সামাজিক জনসচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। 

 

আমার বার্তা/এমই