মেগা মানডে ঘিরে সংঘাতের কারণে ৭ কলেজের পরীক্ষা স্থগিত
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:০২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:
ঢাকার মাতুয়াইলের মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে মোল্লা কলেজের সামনে ঘটা এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ।
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে' কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন।
এ সময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করা হলে তারা সড়কে লুটিয়ে পড়েন। আর মোল্লা কলেজের সামনের কাঁচসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোববার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছিল অভিযোগ তুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেন্ট গ্রেগরীতে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সূত্রাপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সোহরাওয়ার্দী কলেজের একদল শিক্ষার্থী ওই হামলা চালান।
সেন্ট গ্রেগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করে একদল পোলাপান এসে আমাদের কলেজে কলেজে হামলা চালায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা কলেজ বিল্ডিংয়ের কাঁচের গ্লাস, চেয়ার, টেবিল এসব ভাঙচুর করে। আমাদের শ্রেণিকক্ষ, অধ্যক্ষের রুমের দরজা, শিক্ষকরুমসহ প্রায় ৩০/৪০টি কক্ষে তারা ভাঙচুর করেছে। কলেজের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়।’
এ হামলার নিন্দা জানিয়ে সেন্ট গ্রেগরী স্কুল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল এন্ড কলেজে বহিরাগত ৩০/৩৫ জন উশৃঙ্খল যুবক নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় তারা নিরাপত্তাকর্মী নাজমুল হক ও সুমন গোমেজকে ব্যাপক মারধর করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল এন্ড কলেজ এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’
এদিকে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকা ও মাতুয়াইলে দুদিন ধরে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সাত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের পরীক্ষা ‘অনিবার্য কারণে’ স্থগিত করা হয়েছে।
এ পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ‘শিগগিরই’ ঘোষণা করা হবে এবং অন্যান্য পরীক্ষার সময়সূচির অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
আমার বার্তা/এমই