মাজারের গাছ কেটে ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে: ফরহাদ মজহার

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘শাহ আলী (র.) মাজারের গাছ কেটে ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে, এর বিচার হতে হবে। সরকারের তিনজন উপদেষ্টা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকেও অসম্মান করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ধুও গান-সংগীত বন্ধ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। অথচ আমরা সেই সাধনা আবার শুরু করেছিলাম। কেন তা বন্ধ করা হলো, তার জবাব মাজার কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।’

শনিবার (০৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলীর (র.) মাজারে শতবর্ষী বটগাছ কাটা এবং সারাদেশে মাজারে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। আংশিক কেটে ফেলা গাছের গোড়ায় সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মাজার হলো মিলন মেলা। গণতন্ত্রের আরেক নামও মিলন মেলা। যদি মিলনই না হয়, তবে গণতন্ত্র কীভাবে সম্ভব।’

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘আমরা যারা মাজারের ভক্ত, আশিক, তারা জানি—এখানে বরকত আছে, আল্লাহর রহমত নেমে আসে। আজ যে গাছ কাটা হয়েছে, এটা শুধু একটি গাছ নয়—এটা ছিল পাখি, প্রাণী, সাধক-পাগলদের আশ্রয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাজারের ইতিহাস, স্মৃতি, ভক্তি ও সাধনার ধারা।’

সংবাদ সম্মেলনে কবি ও ফিল্মমেকার মোহাম্মদ রোমেল বলেন, ‘পীর-মুর্শিদ, ফকির, দরবেশ, সাধু-সন্তদের মাজার, দরগাহ, দরবার, আখড়া—এসব কেবল ধর্মীয় ক্ষেত্র নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভক্তি ও ভালোবাসার আকুতি থেকেই মাজার গড়ে ওঠে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর একের পর এক মাজার ধ্বংসের ঘটনা ঘটছে। এতে দেশের আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি ও ইতিহাস ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘শাহ আলী বোগদাদীর (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে শতবর্ষী বটগাছের ডাল কেটে দেওয়া হয়েছে। এর আগে সিন্নিগাছ নামে পরিচিত বটগাছের গোড়ায় মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এ গাছের জন্ম হয়েছিল হযরত শাহ আলী বোগদাদীর ব্যবহৃত লাঠি থেকে। বহু ভক্ত এই গাছের নিচে মানত করতেন। বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হলেও ভক্তরা এটিকে আধ্যাত্মিক চর্চার ওপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন।’

মোহাম্মদ রোমেল আরও বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচ মাস আগে মাজার প্রাঙ্গণের এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী গান-সংগীত নিষিদ্ধ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মাজার কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ‘হঠকারী কাজ’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। মাজারকে সংস্কৃতির অংশ হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। তবে এরপরও মাজার প্রাঙ্গণে ওয়াজ মাহফিলে গানকে ইসলাম ও কোরআনের শত্রু হিসেবে প্রচারণা চালানো হয়। ভক্ত-আশেকানদের অভিযোগ, শুধু শাহ আলীর মাজার নয়, সারাদেশে আধ্যাত্মিকতা চর্চায় ক্রমেই নতুন নতুন বাধা তৈরি হচ্ছে।’’

সংবাদ সম্মেলন শেষে কবি ফরহাদ মজহারসহ মাজারের পাগলদের নিয়ে ১০ মিনিটের জন্য মাজারের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন।


আমার বার্তা/এমই