বাংলাদেশ মেডিকেলে রোগীর স্বজনকে পেটালেন আনসার সদস্যরা, ভিডিও ভাইরাল
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল) প্রাঙ্গণে রোগীর স্বজনকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী রাতুল চৌধুরী দাবি করেছেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে প্রশাসনিক ভবনে টেনে নিয়ে মারধর করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সেদিনের হেনস্তা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী রাতুল বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে যাই। সেখানে নানা অনিয়ম চোখে পড়ে, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা উল্টো আমাকে আনসার সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। ২০-২৫ জন আনসার আমাকে টেনে হিঁচড়ে প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে যায় এবং পথিমধ্যে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। পরে একটি কক্ষে ১০-১২ জন আনসার সদস্য ও কয়েকজন চিকিৎসক লাঠি ও রড দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটায়। একপর্যায়ে আমাকে উলঙ্গ করে মারা শুরু করে, আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, আমার মা বাইরে চিৎকার করছিলেন, বলছিলেন ছেলেকে ছেড়ে দিতে। তখন তারা বলে আমি নাকি গণপিটুনিতে মারা গেছি। আজ যদি অনিয়মের কাছে হেরে যাই, জানবো মানবতার কবর হয়েছে।
ঘটনার সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ, আনসার সদস্যদের আচরণ দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
হাসপাতালটিকে চিকিৎসা নিতে আসা খাইরুল ইসলাম নামক এক স্বজন বলেন, এভাবে একজন রোগীর স্বজনকে টেনে নিয়ে মারা অমানবিক। রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তার জন্য যাদের রাখা হয়, তারাই যদি এভাবে আচরণ করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
আরিফুল ইসলাম নামক আরেকজন বলেন, হাসপাতালের ভেতরে আনসারদের আচরণ দিন দিন ভয় ধরানো হয়ে উঠছে। একটু প্রতিবাদ করলেই তারা হামলে পড়ে।
এদিকে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই লিখেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে আনসার সদস্যদের খারাপ ব্যবহার এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাদের দাবি, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এদিকে রোগীর স্বজনকে হেনস্তা প্রসঙ্গে একাধিক আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের একজন বলেন, আনসার সদস্যরা এখন থেকে শুধু দায়িত্ব পালন করবে। কারও সঙ্গে অতিরিক্ত কোনো কথা বা বক্তব্য দিতে কর্তৃপক্ষ আমাদের নিষেধ করেছে।
তবে রোগীর স্বজনকে হেনস্তা বা মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ৯ অক্টোবর সকালে বিএমইউ ক্যান্সার ভবনে আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে দৈনিক সীমা পূর্ণ হওয়ায় সামান্য বাগবিতণ্ডা হয়। দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে উভয় পক্ষকে পৃথক করে। পরে দুই ব্যক্তি রেজিস্ট্রার কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ করলে তাদের শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, দায়িত্বে থাকা সদস্যরা পেশাদারিত্ব, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছেন। কোনো সাংবাদিককে বাধা দেওয়া হয়নি এবং সংবাদ প্রচারে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি।
আনসার বাহিনী প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ভিডিওকে ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে।
এ ঘটনার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেদিন ঘটনাটি অবশ্যই নিন্দনীয়। তবে যতটুকু জেনেছি রোগীর স্বজনদেরও সেই ঘটনায় দায় ছিল। আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
আমার বার্তা/জেএইচ