সড়কে অবরোধ প্রত্যাহার করলেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে অবরোধ শুরু করেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। দ্রুত হাসপাতালের কার্যক্রম চালু, প্রয়োজনীয় ক্লিনিক্যাল ক্লাস (হাতে-কলমে শিক্ষা) নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে সুনামগঞ্জ–সিলেট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা।

জেলা প্রশাসক, কলেজের অধ্যক্ষ ও পুলিশ সুপারের বৈঠকের পর বেলা একটায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলমান থাকবে।

সকাল ৯টায় মেডিকেল কলেজের সামনে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দুই দিকে প্রচুর যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। খবর পেয়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে পার্শ্ববর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে না নেওয়ায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ও পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহাম্মেদ ঘটনাস্থলে যান। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাক আহমেদ ভুঁইয়াসহ তাঁরা বৈঠক করেন। বৈঠকের পর বেলা একটার দিকে অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

একই দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও কলেজে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহপরান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সড়ক অবরোধ স্থগিত করেছি। তবে ক্লাস বর্জন চলবে। কাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের একটি প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

আরেক শিক্ষার্থী জানান, মেডিকেল কলেজটিতে হাসপাতাল চালুর কথা ছিল ২০২৩ সালে। এরপর সময় বাড়িয়ে সেটা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে করা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে ২০২৬ সালে। এটি চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে পরিষ্কার একটি ‘ডেট লাইন’ দাবি শিক্ষার্থীদের।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাক আহমেদ ভুঁইয়া জানান, চলতি বছরের জুলাইয়ে হাসপাতাল চালু হওয়ার কথা ছিল। এই প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বেড়েছে। ভবন বুঝে নেওয়াসহ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা করতে হবে। হাসপাতাল চালু হলে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের অসুবিধা কেটে যাবে। বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি আন্তরিক। বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি একটা সমাধান আসবে।’

শিক্ষার্থীরা জানান, মেডিকেল কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে হয়। এ জন্য ওয়ার্ডে গিয়ে হাতে-কলমে এই শিক্ষা নেন তাঁরা। কিন্তু কলেজে হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে দুদিন এই ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও কলেজ থেকে ওই হাসপাতাল দূরে হওয়ায় যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। আবার সেখানেও নানা সমস্যা রয়েছে। যে কারণে তাঁদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস যথাযথভাবে হচ্ছে না।

কর্মসূচি থেকে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লিনিক্যাল ক্লাস নিশ্চিত করা, ওয়ার্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠমো ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ, ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও রেজিস্টার নিয়োগ; সার্জারি, মেডিসিনসহ সব ক্লিনিক্যাল বিষয়ের যথাযথ ওয়ার্ড ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। পরিবহনব্যবস্থার ঘাটতি দূর করা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতাল চালুর দাবি জানানো হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মদনপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অবস্থিত। হাসপাতালটি হবে ৫০০ শয্যার। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর প্রায় দুই বছর পর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কলেজে পাঁচটি ব্যাচে ২৮০ জন শিক্ষার্থী আছেন।


আমার বার্তা/এল/এমই