মুরাদনগরের ধর্ষণকাণ্ড: মামলা তুলে নিতে চান ভুক্তভোগী নারী
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ১৯:০৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

কুমিল্লা মুরাদনগরের ধর্ষণের ঘটনায় মূল আসামি ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাইছেন ভুক্তভোগী নারী।
রোববার (২৯ জুন) সকালে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান তিনি। এর আগে ভুক্তভোগী ওই নারী নিজেই মুরাদনগর থানায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে (৩৮) আসামি করে ধর্ষণ মামলা করেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ফজর আলীকে আসামি করে করা মামলা তিনি তুলে ফেলবেন। তাকে এ মামলা তোলার জন্য কেউ কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করেননি। তিনি ফজর আলীর বিচার চান না, তিনি চান দেশে শান্তি থাকুক।
মামলা কেন তুলতে চাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার স্বামী বলছেন মানসম্মান যা যাওয়ার তা গেছে। মামলা করলে তো তা আর পাওয়া যাবে না। তাই নিজ ইচ্ছায় তিনি মামলা তুলে ফেলবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীর সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল ফজর আলীর। ওই নারী স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন ১৫ দিন আগে। ঘটনার রাতে পাশের বাড়িতে পূজা চলছিল। বাড়িতে একা ছিলেন ওই নারী। এ সুযোগেই ফজর আলী কৌশলে তার বাড়িতে প্রবেশ করে।
একটি সূত্র জানায়, ফজর আলীকে ধরার জন্য একটি চক্র ওঁত পেতে ছিল বাড়ির পাশে। রাতে যখন ফজর আলী ভুক্তভোগীর বাড়িতে প্রবেশ করে, তার কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক দরজা ভেঙে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। পরে তাদের মারধর ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে ।
ভিডিওতে দেখা যায়, জোর করে ভিডিও করছে স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ সময় ভুক্তভোগী নারী কাপড় পরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিডিও ধারণকারী যুবকরা কাপড় পরায় বাধা দেয়। একদিকে ভিডিও করতে থাকে, অন্যদিকে তারা ফজর আলীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়।
তারপর ফজর আলী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল। গত শুক্রবার ওই নারী মুরাদনগর থানায় গিয়ে ফজর আলীকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন।
ওই নারীর মা জানান, টাকা লেনদেনের বিষয়ে ফজর আলী তার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু ফজর আলীর ভাই এ আসা যাওয়া পছন্দ করতো না। ঘটনার রাতে ঘরে এসে দেখি আমার মেয়ে ও ফজর আলীকে মারধর করছে স্থানীয় যুবকরা। আমার ওপরও হামলা করে তারা। এলাকার যুবকরাই দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেছে বলে জানান ভুক্তভোগীর মা। তার মেয়ের জামাই বিদেশ থেকে বলেছেন কোনো মামলা না করার জন্য। মান ইজ্জত যা যাওয়ার গিয়েছে। যেহেতু জামাই আমার মেয়েকে নিয়ে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছে, এ জন্য মামলা তুলে নেয়ার চিন্তা করছি। জামাই বলেছে আপনার মেয়ে আপনি কীভাবে বাঁচাবেন এ চিন্তা করেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘটনার রাতে তার বাবা-মা বাড়ির বাইরে ছিলেন। ওই সময় ফজর আলী ঘরের বাইরে এসে দরজা খুলতে বলেন। ভুক্তভোগী দরজা না খুললে অভিযুক্ত কৌশলে ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে ফজর আলীকে আটক করে মারধর করে ও ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। পরে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ফজর আলী বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। ভুক্তভোগীর স্বামী গত পাঁচ বছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, টাকা ধার নেয়ার সূত্রে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের পরিচয় ছিল।
এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফজর আলী (ধর্ষণের মূল অভিযুক্ত) ও ভিডিও ধারণকারী অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু। সবাই মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচকিত্তা গ্রামের বাসিন্দা।
আমার বার্তা/এমই