পাহাড়ে বহিরাগত দিয়ে দেশীয় ও অটোম্যাটিক অস্ত্রে ফায়ারিং করা হচ্ছে

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ মঙ্গলবার ব্রিফিং করেন।

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য ইউপিডিএফকে (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) দায়ী করেছেন সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে সংগঠনটি।

এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও অটোম্যাটিক (স্বয়ংক্রিয়) অস্ত্রে ফায়ারিং (গুলি) করা হচ্ছে।  
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি সেনানিবাসে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজিয়ন কমান্ডার এসব কথা বলেন।

হাসান মাহমুদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির বিষয়টি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। এসবের  প্রমাণাদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আছে। নানা অপপ্রচার ও উসকানির মধ্যেও সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ রক্ষায় সবকিছু করবে।

উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা চলছে জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, সবাই যেন এই উৎসবে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারে সে সুযোগটি আমরা করে দিচ্ছি।  

রিজিয়ন কমান্ডার ইউপিডিএফকে দেশের স্বার্থে অবরোধ প্রত্যাহার করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানান।

এদিকে ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় উদ্ভূত পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সর্বত্রই বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। ‘জুম্ম ছাত্র -জনতা’র ব্যানারে ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চতুর্থদিনের মতো চলছে। যদিও সংগঠনটির পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছি।  

আজও যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগও অচল হয়ে পড়েছে। ফলে মালবাহী শতাধিক ট্রাক আটকে থেকে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে সেখানে অবরোধ ডাকা হয়। এই অবরোধ কর্মসূচি থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। এতে তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। আহত হন সেনা কর্মকর্তাসহ বহু পাহাড়ি ও বাঙালি। গুইমারায় রামসু বাজারসহ বহু ঘরবাড়ি ও অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।  

পাহাড়ি ও বাঙালিরা পরস্পরকে ঘটনার জন্য দায়ী করছেন। আজও খাগড়াছড়ি শহর, শহরতলী ও গুইমারার অধিকাংশ দোকানপাট খোলা হয়নি। সীমিত সংখ্যক ইজিবাইক চলাচল করতে দেখা গেলেও নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী জানান, রোববার জেলার গুইমারায় সহিংসতায় নিহত তিন পাহাড়ির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতরাতে পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয়। রাতেই তাদের দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ চলছে।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা বহাল আছে।  

জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে নির্দেশনা তুলে নেওয়া হবে।

এদিকে জানা গেছে, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনকারী ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ছয় প্রতিনিধি প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবি উপস্থাপন করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।


আমার বার্তা/এমই