হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে সংঘর্ষে ৫ জন নিহতের ঘটনায় মামলা
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে হাতিয়া থানায় মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী নিহত মোবারক হোসেন শিহাবের চাচা ও নিখোঁজ শামছুদ্দিনের ভাই আবুল বাশার।
নিহত মোবারক হোসেন শিহাব সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। অপরদিকে নিখোঁজ মো. শামছুদ্দিন হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত ছায়দুল হকের ছেলে।
বাদী আবুল বাশার বলেন, ভাতিজার ময়নাতদন্ত ও দাফন কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ায় মামলা করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমরা অর্ধেক এজাহার লিখে মরদেহ দাফন করেছি। তারপর দাফন শেষে এসে পুরোটা লিখেছি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নিখোঁজ শামছুদ্দিনের স্ত্রী মাহফুজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, মনির মেম্বারসহ কয়েকজন আমার স্বামীকে চরে জমি দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন খবর পেয়ে আমার ছেলে শিহাব তার বাবাকে ফিরিয়ে আনতে চরে যায়। সেখানে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি ছেলের লাশ পেলেও স্বামীর কোনো সন্ধান এখনো পাইনি। সম্ভবত ডাকাতরা আমার স্বামীকে হত্যা করে জাগলার চরের কোনো নির্জন স্থানে মাটিচাপা দিয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
নিখোঁজ শামছুদ্দিন ওরফে কোপা শামছুর ছেলে মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবাকে জমি দেওয়ার কথা বলে মনির মেম্বার জাগলার চরে নিয়ে যায়। সঙ্গে আমার ভাইও ছিল। ভাইয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে, কিন্তু বাবার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি জীবিত না মৃত— আমরা তার সন্ধান চাই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এ সময় গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত এবং অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হন।
নিহতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শামছুদ্দিনের ছেলে মো. মোবারক হোসেন শিহাব, সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন, হাতিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম লক্ষ্মীদিয়া মৃত শাহী আলমের ছেলে হক সাব, মো. কামাল উদ্দিন, সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর মজিদ এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবুল কাশেম।
স্থানীয়দের দাবি, জাগলার চরের জমি এখনো সরকারিভাবে কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ৫ আগস্টের পর জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা সামছু বাহিনী প্রতি দাগ ২০ হাজার ৫০০ টাকায় জমি বিক্রি শুরু করে। পরে সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী ওই জমির দখল নিতে মরিয়া হয়ে আরও বেশি দামে জমি বিক্রি শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এর জেরেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার ও নিখোঁজদের উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমার বার্তা/এমই
