টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএ’র দুই কর্মচারীকে বদলি

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৪, ১৪:৩১ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাহিকুল ইসলাম ও নাজমুল হুদা

টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএ’র দুই কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। তবে ডিভিশনের প্রধান বলেছেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ওই দুইজনকে বদলি করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৩ জুন উপ পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান সিরাজ এর স্বাক্ষরিত আদেশে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সাহিকুল ইসলামকে চিলমারী নদী বন্দর  এবং সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা নাজমুল হুদাকে সুনামগঞ্জ নদী বন্দরে বদলি করা হয়েছে। তবে এই আদেশ এর কথা অস্বীকার করেছেন সাহিকুল ইসলাম।  তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন, আমি যেখানে কাজ করি সেখানেই আছি।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার জালিয়াতিসহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত এই সংঘবদ্ধ চক্র। এরা নিম্নমানের চাকরি করলেও ডিভিশনে এদের দাপটে অস্থির থাকেন ঠিকাদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পর্যন্ত। এই প্রথম  সাহিকুল ইসলাম ও নাজমুল হুদা টেন্ডার জালিয়াতি করে ধরে পড়েন। বিষয় টি নিয়ে ডিভিশনে বেশ হৈচৈ পড়লে তাদেরকে গত ১০ জুন বদলির আদেশ  এর কপি পাঠানো হয়। সংঘবদ্ধ এই চক্র বদলির আদেশ ঠেকাতে বেশ মরিয়া হয়ে উঠে ছিলেন। এখনো বদলি ঠেকাতে বেশ তৎপর দু'জনেই। কিন্তু চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তা পেরে উঠেনি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর জানা গেছে।

এদিকে নাজমুল হুদার বিষয়ে আরো অভিযোগ হচ্ছে, এক উচ্ছেদ অভিযানের মালামাল ম্যাজিস্ট্রেট এর ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে বিক্রি করে ছিলেন। ওই সময় বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের প্রভাবশালী কর্মকর্তা একেএম আরিফ উদ্দিনের প্রচেষ্টায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। নাজমুল হুদা ডিভিশনের কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। কারণ একজন সিবিএ নেতা এবং একজন উপ পরিচালক তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

নাজমুল হুদা এবং সাহিকুল ইসলাম এর বিষয়ে ডিভিশনের কেউ মুখ খুলতে চান না। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, তারা উপরের বড়ো স্যারদের ম্যানেজ করে সব কাজ করেন। তবে এবার তাদের বিষয় টি নিয়ে কড়াভাবে নজর দিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। তাই তদন্তে দু'জনের এযাবৎ কালের সব অপকর্ম এবং দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। এমন টাই আশা করছেন বিআইডব্লিউটিএ’র সাধারণ কর্মচারীরা। তাই তারা তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান এর কাছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, সাহিকুল এগারো বছর ধরে বন্দরে ডিউটি করেন। সে বিভিন্ন ঘাটের ইজারার সাথে  জড়িত। এটা একটা বড়ো সিন্ডিকেট। এখানে একজন সিবিএ নেতার হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছু হয় না। আরো অভিযোগ হচ্ছে, একটি ঘাট যখন ইজারা দেয়া হয়, তখন এক বছর এর জন্য দেয়া হয়। কিন্তু এই সিন্ডিকেট ঘাট ইজারাদার এর সাথে আঁতাত করে তাকে দিয়ে মামলা ঠুকে দেয়। তাতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও লাভবান হয়ে থাকে এই সংঘবদ্ধ চক্র। যেখানে সরকারের কোষাগারে লাখ লাখ টাকা থাকার কথা, সেখানে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করেন এসব দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি। বন্দরে ডিউটি করে এদের প্রত্যেকেই  বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স এবং অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। 

বদলির বিষয়ে সাহিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে এখনো আমি আদেশ পাইনি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি কিছু জানি না। কি কারণে বদলি করা হয়েছে। আল্লাহ মা'বুদ জানেন। তিনি দাম্বিকতার সাথে বলেন, আমি তো যেখানে আছি সেখানেই কাজ করতেছি। আর নাজমুল হুদাকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।

নাজমুল হুদা ও সাহিকুল ইসলামের বদলির বিষয়ে বন্দর ও পরিবহণ বিভাগ এর পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। এক জায়গায় চার পাঁচ বছর থাকলে এমনিতেই বদলি করা হয়। নাজমুল হুদা ও সাহিকুল ইসলামের বদলির বিষয় টিও তাই। নাজমুল হুদা ও সাহিকুল ইসলাম এর বদলির বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সিবিএ নেতা সারোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। আমি এসময় দেশের বাড়িতে ছিলাম।


আমার বার্তা/এমই