গণপূর্তের ই/এম ডি. প্রকৌশলী ফারুক বদলীর পরেও ৬ বছরেই কোটিপতি
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

গণপূর্ত ই/এম উপসহকারী (ডিপ্লোমা) প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন। তিনি ২০১৯-এ স্বৈরাচার সরকারের সময়ে চাকরিতে ঢুকেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদ আওয়ামী যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফের সুপারিশে ২০২১ সালের শেষদিকে মন্ত্রী পাড়ায় পোষ্টিং বাগিয়ে নিয়ে দাপ্তরিক বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডে হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য।
মন্ত্রীপাড়ায় বিভিন্ন কাজের নামে একই কাজ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বার বার বাস্তাবয়ন দেখিয়ে বেনামী ঠিকাদারী ব্যবসা করে এই গণপূর্ত মাঠ কর্মকর্তা চাকরির মাত্র ৬ বছরেই নিজজেলা ঝিনাইদহে বিলাশবহুল বাড়ি কমপক্ষে ১০ বিঘা জমিসহ ঢাকায় অত্যাধুনিক এপার্টমেন্টসহ নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সহায়-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের এটর্নী জেনারেল এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবের নাম বিক্রি করে গণপূর্ত ডিপ্লেমা প্রকৌশলী মহলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বদলী নিয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতংক বা ত্রাস সৃষ্টি করছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডি, প্রকৌশলী ফারুক প্রায় ৪বছর ছিলেন মন্ত্রী পাড়ায়। গত ৮ অক্টোবর ২০২৫ইং তারিখে তাকে বদলী করা হয় গণপূর্তের ই/এম ৭নং ডিভিশনের ১৪নং সাবডিভিশনের সেকশন কর্মকর্তা হিসাবে। অবৈধ অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে একজন আনডিউ উপসহকারী প্রকৌশলীকে ল্যাং মেড়ে ফেলে দিয়ে ওই সেকশনে ফারুক বদলী বাগিয়ে নিয়ে তা ইতিমধ্যে আরো ১মাস এক্সটেনশন করে নিয়েছেন। এই বদলী ও এক্সটেনসন কাজে উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক ২০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ করেছেন বলে তার ১৯ ব্যাচের বন্ধু মহলে বলে বেড়াচ্ছেন।
২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেইলীরোডের মিনিষ্টার্স এপার্টমেন্টের কিছুঅংশ, রাষ্টীয় অতিথি ভবন সুগন্ধা, ফরেন সার্ভিস একাডেমী, রমনা পার্ক, হেয়ার রোডের সকল বাসা-বাড়ি, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, ডিএমপি হেডকোয়াটার্স সহ বিভিন্ন স্থাপনার বৈদ্যুতিক/যান্ত্রিক কাজগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি আর লুটপাটের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ২০২৩-২৬ অর্থবছরে অর্থ্যাৎ ২৪ এর জানুয়ারীতে হেয়ার রোডের বাড়িগুলোতে আ’লীগের নতুন মন্ত্রীসভার মন্ত্রী-এমপিরা বাসায় ওঠার উপলক্ষে ব্যাপক বৈদ্যুতিক/যান্ত্রিক মেরামত রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহ কাজ করা হয়। কিন্তু ৪ আগষ্টের পরে স্বৈরাচারের মন্ত্রীরা পালিয়ে গেলে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যগণ ওই বাসাগুলোতে ওঠার উপলক্ষ্য করে পুনরায় কয়েক কোটি টাকার কাজ করা হয় মাত্র ১০/১১ মাসের ব্যবধানে।
কাজগুলো করানোর নামে পুরনো যন্ত্রপাতির ও গৃহস্থালী ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির বদলে নতুন সরবরাহ ও স্থাপণের নামে ব্যাপক জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। এমনকি পুরনো ভালো মানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো কোন প্রকার সার্ভে না করে উর্দ্ধতনদের যোগসাজশে গায়েব করে দেয় এই উপসহকারী প্রকৌশলী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানায়, ওই সকল যন্ত্রপাতি বিক্রি করেও ডি. প্রকৌশলী ফারুক অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার এসি ফ্রিজ জি-সায়ার গ্রিজার ওয়াটার হিটার ওয়াটার পাম্প এ রকম কতিপয় ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি সরবরাহ দেখিয়ে পূণঃ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষনের নামে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করা হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। ওই লুটপাটের সামান্য নমুনা এখানে তুলে ধরা হলো-
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১,৯৯,৫১,৫২৮/ টাকার চুক্তিমূল্যে হেয়ার রোডের প্রধান বিচারপতির বাসায় অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের ইলেকট্রিক্যাল রিপেয়ার কাজের আওতায় প্রয়োজনীয় লাইট ফ্যান এসি পাম্প জি-সায়ার সিসিটিভি ইন্টারকম গার্ডেন লাইট এবং সিকিউরিটি লাইট সরবরাহের নামে মাত্র অর্ধ কোটি টাকার কাজ করে বা এর থেকে সামান্য বেশী কাজ করে ১ কোটি টাকারও বেশী লোপাট ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। একই অর্থবছরে ২১,৮৪,৫২৫/ টাকা বরাদ্দে হেয়ার রোডের ৬নং বাংলো বাড়িতে সিসিটিভি ইন্টারনেট ও ইন্টারকম টেলিভিশন ফ্রিজ ওভেন ওয়াসিং মেসিনসহ অন্যান্য গৃহস্থালী ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপনের নামে বেশীরভাগ বরাদ্দ লোপাট করা হয়েছে। একই অর্থবছরে ২৯,৯৮,৯৬৬/- টাকা চুক্তিমূল্যে হেয়ার রোডে এটর্র্নী জেনারেলের বাংলোর ভিতরের পুলিশ ব্যারাকে ইলেকট্রিক লাইট ফ্যান ফিটিংস ফিক্সারস পরিবর্তন এবং এসি টিভি ফ্রিজ ওভেন সিকিউরিটি ও গার্ডেন লাইট সরবরাহ স্থাপনসহ আনুসাঙ্গিক কাজ, একই অর্থবছরে ১১,৩৯.৫৮১/- টাকা চুক্তিমূল্যে হেয়াররোডের ২নং বাংলো তন্ময়ে ইলেকট্রিক্যাল ফিটিংস ফিক্সারস সিকিউরিটি লাইট ওয়াটার পাম্প সরবরাহ স্থাপনসহ আনুসাঙ্গিক কাজ, একই অর্থবছরে ২৮,৬৬,৩১৩/-টাকা বরাদ্দে হেয়ার রোডের ৪নং বাংলোতে এসি সরবরাহ স্থাপনসহ ইন্টারনেট সংযোগ, ইলেকটিক্যাল ওয়্যারিং রিপলেসমেন্টসহ বৈদ্যুতিক ফিটিংস্ ফিক্সারস সুইচ সকেট সার্কিট ব্রেকার এসডিবি-এমডিবি পরিবর্তনসহ আনুসাঙ্গিক কাজ।
একই অর্থবছরে হেয়ার রোডের ২নং বাংলোবাড়ি তন্ময়ে ৩৩,০২,৪৪৬/- টাকা বরাদ্দে এসি রেফ্রিজারেটর ব্রাকেট লাইট স্পট লাইট টিউব লাইট সিলিং ফ্যান পানি সরবরাহের পাম্প প্রেসার পাম্প জি-সায়ার সরবরাহ স্থাপন এবং ভিতরের ও বাইরের ওয়্যারিং পরিবর্তনসহ আনুসাঙ্গিক কাজ, একই অর্থবছরে হেয়ার রোডের এম-৩ উত্তরায়ন নামক বাংলো বাড়িতে ৩০,৪৪,৬৮৫/- টাকা বরাদ্দে রেফ্রিজারেটর ওভেন ওয়াটার ফিল্টার বৈদ্যুতিক আয়রনসহ গৃহের ব্যবহার্য্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ স্থাপনসহ অভ্যন্তরীণ সুইচ সকেট বাহিরের সিকিউরিটি ও ফ্লাড লাইট সরবরাহ স্থাপনসহ আনুসাঙ্গিক কাজ, একই অর্থবছরে হেয়ার রোডের ৩৫নং সরকারি বাংলোতে ২৩,৭৮,৭১১/-টাকা বরাদ্দে এসি সরবরাহ স্থাপণ অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এর পূণঃ নবায়ন এবং সকল সুইচ সকেট ডিবি এসডিবি এর নবায়ন কাজ, একই অর্থবছরে একই বাংলো বাড়িতে ১৮,৯৩,৫৪৪/- টাকা চুক্তিমূল্যে পানি সরবরাহের পাম্প জি-সায়ার সিসিটিভি ইন্টারনেট পিএবিএক্স সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপন কাজ।
একই অর্থবছরে হেয়ার রোডের ২০নং বাংলো বাড়িতে অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক ফিটিংস ফিক্সারস পরিবর্তনসহ এসি টিভি ফ্রিজ ওভেন ওয়াসিং মেসিন সিসিটিভি ইন্টারনেট ইন্টারকম সহকারে বাইরের গার্ডেন লাইট ওয়াটার পাম্প সরবরাহ ও স্থাপন কাজ, একই অর্থবছরে একই রাডের এম-১৫ নিকেতঁন বাংলাতে ৪০,১৪,৪৫৯/- টাকা বরাদ্দে ভিতরের ইলেকট্রিক ফিটিংস ফিক্সারস পরিবর্তন সহকারে এসি লাইট ফ্যানসহ গৃহের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপণ কাজ, একই অর্থবছরে হেয়ার রোডের ৬নং বাংলো নিলয়ে পুলিশ ব্যারাক স্টাফ কোয়ার্টারে ২৩,৪৪,৫৮৯/- টাকা চুক্তিমূল্যে এসি সরবরাহ স্থাপন লাইট ফ্যান ফিটিংস এর পূনঃ বাসন অভ্যন্তরীণ সুইচ সকেট ফিটিং ফিক্সারস পরিবর্তনসহ বাইরের সিকিউরিটি লাইট পানির পাম্প জি-সায়ারসহ আনুসাঙ্গিক বৈদ্যুতিক কাজগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি আর কারসাজির মাধ্যমে বেশীরভাগ বরাদ্দ উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুকের নেতৃত্বে লোপাট করা হয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণাদিতে জানা যায়। এ নিয়ে বিস্তারিত থাকছে পরবর্তীতে।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ফারুকের মোব্ইালে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তার কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।
আমার বার্তা/এল/এমই