অপহরণ সৌদি আরবে, মুক্তিপণ নেয় বাংলাদেশে; চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

সৌদি আরবে অবস্থানকালে একটি চক্রের হাতে অপহরণের শিকার হওয়ার পর স্ত্রী ও শ্বশুরের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এ পরিশোধ করা হয় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এরপর আবার সৌদি আরবেই ছাড়া পায় অপহৃত ব্যক্তি।
এরকম একটি ঘটনায় চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম মো. জিয়াউর রহমান (৪২)। তিনি মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালীর খোলাবাড়ী আব্দুল গণি মোল্যার ছেলে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মাগুরা জেলার শালিথা শানাথীন হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারপূর্ব তথ্য বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্বিক সহযোগিতা করে সিআইডির এলআইসি ইউনিট।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, এজাহারে উল্লেখ করেন, বাদীর মেয়ের জামাই ২০ বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করে এবং সেখানে নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা পরিকল্পিতভাবে বাদীর মেয়ের জামাই ভিকটিম রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহর হতে অপহরণ করে। পরে রাসেলের বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে অজ্ঞাত ইমো আইডি এবং ভিওআইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। নইলে রাসেলের ক্ষতি করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
মুক্তিপণের অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের কিছু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরসমূহ প্রদান করে।
পরবর্তী সময়ে বাদী, রাসেলের বড় ভাই সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপায়ন্তর না পেয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের মুক্তিপণ দিতে রাজী হয়। সাইফুল ইসলাম খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকা থেকে বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে সর্বমোট ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং অপহরণকারীদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে মোট ২৫ লাখ টাকা প্রদান করে।
সর্বমোট ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ পেয়ে ভুক্তভোগী রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে দেয়। চলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা ভিক্টিম রাসেলের হাতের ছাপ এবং আকামা আইডি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে অপহরণের ঘটনা ফাঁস হলে পুনরায় খুন ও জখমের ভয়ভীতি দেখায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে এসে পরিবারকে সমস্ত কিছু খুলে জানালে ভুক্তভোগী রাসেলের শ্বশুর বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় গত ২১ জানুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্তে জানা যায়, অপহরণকারীরা যেসমস্ত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরসমূহ প্রদান করে সেগুলোত তথ্যাদি বিশ্লেষণসহ দেশে এবং বিদেশে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তকালীন অপহরণকারীদের দেওয়া মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরসমূহের তথ্যাদি পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তার জিয়াউর রহমান এ ঘটনার অন্যতম একজন সক্রিয় সদস্য মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৌদি আরবে অবস্থিত অজ্ঞাতনামা অপহণকারীদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজসে মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে।
এখন পর্যন্ত জিয়াউর রহমানসহ এ মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দুজন বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট পরিচালনা করছে। গ্রেপ্তার জিয়াউর রহমানকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরণ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান সিআইডরে ওই কর্মকর্তা।
আমার বার্তা/এমই
