এক হওয়ার আগেই বিচ্ছেদের পথে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়া পদ্মা ব্যাংককে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এক্সিম ব্যাংক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা দুর্বল অবস্থায় থাকা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না।

ব্যাংক দু’টির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগের সরকারের আমলে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কেউই আর একীভূত হতে চাচ্ছে না। বিশেষ করে, বিভিন্ন কারণে তারল্য সংকটে পড়া এক্সিম ব্যাংক এখন পদ্মা ব্যাংকের দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ। আবার পদ্মা ব্যাংকও বলছে, একীভূত নয়- ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা।

এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই অনেকটা জোর করে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে কোনো মতামতও চাওয়া হয়নি।

এদিকে দুর্দশায় পড়া পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চলতি বছরের ১৮ই মার্চ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মূলত এটা হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। সরকার পরিবর্তনের পর দু’টি ব্যাংকই এখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাচ্ছে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে পদ্মা ব্যাংক আমানত সংগ্রহ কার্যত বন্ধ আছে। নতুন ঋণ দিচ্ছে না। পুরনো ঋণ তদারকি এবং শাখা পর্যায়ে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে।

এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার এক মাস পরেই পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান পদত্যাগ করে চলে যান। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন। তারল্য জোগান দেয়ার কারণে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদে বসতেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সোনালী ব্যাংক থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত আরও তিন ব্যাংক জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ শূন্য হওয়ায় পদ্মা ব্যাংক থেকেও তারা পরিচালক পদ হারিয়েছেন। একসঙ্গে চার পরিচালক হারিয়েছে পদ্মা ব্যাংক। এখন ব্যাংকটি পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকও করতে পারছে না।

পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কাজী মো. তালহা বলেন, আমরাও এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একত্রিত হতে চাই না। আমার বিশ্বাস, একটু সহায়তা পেলে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

অপরদিকে পদ্মা ব্যাংককে সঙ্গে নিতে চাচ্ছে না এক্সিম ব্যাংকও। এটার সঙ্গে পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করা হবে না বলেও জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন। গত সোমবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাদের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষ এক্সিম ব্যাংকে প্রচুর আমানত রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আমরা তারল্য সহায়তা চেয়েছি। ইতিমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংক দু’টি একীভূত হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের ব্যাংকিং টাস্কফোর্স। তারা ব্যাংকগুলোকে নিরীক্ষা করে দেখবে এবং কোন সমস্যার কী সমাধান তার সুপারিশ করবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।


আমার বার্তা/জেএইচ