চাহিদা বাড়ায় কমছে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনায় ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বেড়ে যাওয়া সরকারের স্বল্পমেয়াদে ধার নেওয়ার অন্যতম টুল ট্রেজারি বিল এবং দীর্ঘমেয়াদে ধার নেওয়ার টুল ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ১০ থেকে ২৯ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) ৪ হাজার কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদি বন্ড বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়েছিল। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সুদহারে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা অফার করে। সবশেষে ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ সুদহারে এই বন্ড বিক্রি করা হয়।

এর আগের নিলামে এই বন্ড বিক্রি করার ক্ষেত্রে সরকারকে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ সুদ দিতে হয়েছিল। অর্থাৎ, ৫ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার কমেছে ২৯ বেসিস পয়েন্ট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, গত সোমবার এক নিলামের মাধ্যমে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ সুদে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ সুদে ২ হাজার কোটি টাকা এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ সুদে ২ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে সরকার।

এর আগে সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি ট্রেজারি বিলের নিলামে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদ ধরা হয়েছিল। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের সুদের হার কমেছে সর্বোচ্চ ১৪ বেসিস পয়েন্ট।

নাম না প্রকাশের শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকা এবং ঋণ চাহিদা অনেক কমে যাওয়ায় অনেক ভালো ব্যাংকের তারল্য বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরে তারল্য সংকট মোকাবিলায় ছয়টি ব্যাংককে টাকা ছাপানোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেওয়ায় মার্কেটে টাকার জোগান বেড়েছে। এসব তারল্য বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দিকে ঝুঁকছে।

ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ধার করার প্রবণতা কমছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর হিসাব ক্লোজ করতে হয়। তখন ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে ব্যাংকগুলো তারল্য হাতে রাখে। এখন এসব তারল্য বিনিয়োগের সময় এসেছে। তবে ঋণের চাহিদা কম থাকায় ও ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগের বিকল্প না থাকায় তারা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সুদহার না কমিয়ে আগের মতো রাখলে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার বন্ড বিক্রির সুযোগ ছিল।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ শতাংশ আদায় করছে। তবে ঋণের চাহিদা অনেক কমে গেছে। এছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় বেশি সতর্ক এখন।

একইসঙ্গে ঋণ বিতরণ করলে ব্যাংকগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সিআরআর ও এসএলআর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হয়। এছাড়া এসব ঋণ ফেরত পাওয়া যাবে কি না, সেটি নিয়েও ব্যাংকগুলোকে শঙ্কায় থাকতে হয়।

সেসব দিক থেকে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ অনেক বেশি নিরাপদ। প্রথমত, সরকার এর গ্যারান্টর হওয়াতে টাকা আটকে যাওয়ার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, এসব বিল-বন্ডের সুদহার ঋণের সুদের হারের কাছাকাছি। তৃতীয়ত, এসব বিল-বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সিআরআর ও এসএলআর রাখতে হয় না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো এখন বুঝতে পারছে সরকার খরচ কমানোর কারণে ঋণ চাহিদা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিল-বন্ডের সুদহার আরও কমতে পারে। ফলে তারা হাতে থাকা তারল্য লক করে দিতে চাইছে। কারণ, বর্তমানে ঋণের চাহিদা অনেক কমে এসেছে এবং ব্যাংকগুলোর বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ কম।

সামনে মূল্যস্ফীতি কমলে বিল-বন্ডের সুদহার আরও কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার।


আমার বার্তা/এমই