আইএমএফের শর্ত পূরণে পিছিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের পরবর্তী দুটি কিস্তি (চতুর্থ ও পঞ্চম) পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে থাকা চারটি ক্ষেত্র হলো রাজস্ব আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি না হওয়া, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না হওয়া, ভর্তুকি না কমা এবং ব্যাংক খাতের আশানুরূপ উন্নতি না হওয়া। 

দুই সপ্তাহ পর্যালোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আইএমএফের প্রতিনিধিদল বা মিশনের এক ব্রিফিংয়ে এসব বিষয় উঠে এসেছে। মিশন পরবর্তী দুই কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেয়নি। তবে বলেছে, এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওসহ অন্য ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ের আগে মিশনটি ৬ এপ্রিল থেকে গত বুধবার পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে। 

বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই—এ কথা উল্লেখ করে মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এ বৈঠক হবে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল। 

ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। জনগণের আন্দোলন, কঠোর নীতিমালা, বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি দশকের সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭ থেকে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে। যদিও এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ থেকে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

আইএমএফের মিশনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। এতে অর্থনীতির পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরে আইএমএফ। 

জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহের নিম্নতম হারের কথা উল্লেখ করে আইএমএফ করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেয়। সংস্থাটি বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া কর ছাড় কমাতে হবে, কর নীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে। রাজস্ব আয় সংগ্রহে এমন একটি সমন্বিত কৌশলপত্র করতে হবে, যাতে এ রাজস্ব দিয়ে সরকার সামাজিক খাতে ভালো ব্যয় করতে পারে এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। 

ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের ওপরও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় জোরালো ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আবার খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি ব্যাংক খাতে দুর্বল তদারকি রোধ এবং নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতার ঘাটতি দূর করার কথাও বলেছে। 

ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে আইএমএফ বলেছে, শুধু পরিকল্পনা নয়, তার বাস্তবায়নে দৃঢ়তা ও ধারাবাহিকতাও থাকতে হবে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনৈতিক প্রস্তুতি ও অবকাঠামো খাতে টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। 

এক প্রশ্নের জবাবে পাপাজর্জি আরও বলেন, রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা এবং ব্যাংক খাতের উন্নয়ন—এ তিন বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। আলোচনা আরও হবে ওয়াশিংটনে।

নীতি সুদহার বর্তমানের ১০ শতাংশ থেকে পরিবর্তনের কোনো সুপারিশ আছে কি না, জানতে চাইলে পাপাজর্জিও বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ব্যাপার।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। 

অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আইএমএফের ঋণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, আইএমএফ ঋণ না দিলে অন্যরাও নিরুৎসাহিত হবে। বৈশ্বিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিতে পারে। 

 

আমার বার্তা/এল/এমই