সরকার জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিকল্প খুঁজছে: আনু মুহাম্মদ

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫, ১৪:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকার জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিকল্প খুঁজছে। বিকল্প হিসেবে বিদেশি কোম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দর না দিয়ে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো দূর করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো যেত। তাহলে এর প্রভাব ভবিষ্যতেও থাকতো।

শুক্রবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক নাগরিক কমিটি আয়োজিত 'গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই' শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অর্থবছর পরিবর্তন করা প্রয়োজন। আমাদের অর্থবছর ব্রিটিশ আমলের মতো জুলাই-জুন হিসেবে আছে। এই অর্থবছরের কারণে দুর্নীতির একটি সুযোগ তৈরি হয় এবং অর্থের অপচয় হয়। এটাকে বাংলা বছর অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল অথবা ইংরেজি বছর অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, এই সরকার একটি বড় দায়িত্ব বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু কিছু পরিবর্তনের গতিপথ তৈরি করা। এই সরকার অস্থায়ী সরকার, এই সরকারের স্থায়ী কোনো মেন্ডেট নেই, এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না। সুতরাং তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু করণীয় আছে, যা সরকার খুব সহজেই করতে পারে। যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এটা বহু বছরের দাবি। যেটা থাকার কথা বাজেটের ৫-৬ শতাংশ, সেটা আছে ১-২ শতাংশ। এটার সূচনাটা হওয়া উচিত এই বছরে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ইতোমধ্যে অনেক দুর্নীতি, অপচয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ আছে। এগুলো থেকে এই দুই খাতকে মুক্ত করতে হবে। সেটা করতে গেলে স্বচ্ছতা আনতে হবে। চিকিৎসা খাতেও তাই। অনেক কেনাকাটা হচ্ছে, সেটি পড়ে আছে। সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। যন্ত্র কেনা হয়েছে কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের লোক নেই। এগুলোর পরিবর্তন করতে হবে।

শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের পরিবর্তনের জন্য একটি সংস্কার এই সরকারের জন্য খুব সহজ ছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এটা ঘোষণা করা যেত, প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সব উপদেষ্টা, সব বিশেষ সহকারী, সব প্রতিনিধি, সরকারি আমলা তাদের চিকিৎসা দেশের সরকারি হাসপাতালে গ্রহণ করবেন। এটা করলে সরকারি হাসপাতালগুলোর আবহাওয়া জাদুর বাক্সের মতো পরিবর্তন হয়ে যেতো। সঙ্গে সঙ্গে যদি তারা সিদ্ধান্ত নিতেন, তাদের সবার সন্তানরা দেশের সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তাহলে দেখতে যে এগুলো চেহারা পাল্টে গেছে। এই সূচনাটি সরকার খুব সহজে করতে পারতেন। গত ৯ মাসে সেটি আমরা দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, শিল্প ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা। এবং জনগণের জন্য পরিবেশবান্ধব যে পথ সেই পথ যাতে শক্তিশালী হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। সরকার সেই কাজগুলো না করে অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে মান-অভিমান করা এটা গ্রহণযোগ্য কাজ নয়। আমরা চাই, সামনের বাজেটে যথাযথ কাজটি সরকার গ্রহণ করুক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রাটা অগ্রসর হোক।

আলোচনা সভায় আগামী অর্থবছরের বিভিন্ন খাতের বাজেট নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলোচকরা। এর মধ্যে কৃষি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন মাহা মির্জা, সংস্কৃতি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন সজীব তানভীর, জ্বালানি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, শিক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন সামিনা লুৎফা নিত্রা, চিকিৎসা বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন হারুন উর রশীদ, জেন্ডার বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন মারজিয়া প্রভা। এ ছাড়া ‘গত দেড় দশকের বাজেটের যেসব প্রবণতা থেকে বের হতে হবে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ‘শ্রীলঙ্কা থেকে কি শিখলাম’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৌশিক আহমেদ, ‘বাজেটে বৈষম্য ও সামাজিক নিরাপত্তা’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কল্লোল মোস্তফা।


আমার বার্তা/এল/এমই