এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১৯:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে আন্দোলনকারী এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তারা আরও বলেন,নিপীড়ন করে যৌক্তিক রাজস্ব সংস্কারের দাবিকে কেউ রুখতে পারবে না, এনবিআরের বিলুপ্তি রোধে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বিসর্জন দিতে রাজি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনের বাইরে সংবাদ সম্মেলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির মহাসচিব ও সেহেলা সিদ্দিকা, সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারসহ নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, আপনারা দেখছেন, আজকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে এনবিআরের তিনটি গেইট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এনবিআর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আজ এনবিআরে ঢুকতে পারছে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ বিষয়টি আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দমন-নিপীড়নের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার যেমন দমন-নিপীড়ন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে পারেনি, ঠিক তেমনি আমাদের ওপর এহেন দমন নিপীড়ন করে আমাদের যৌক্তিক রাজস্ব সংস্কারের দাবিকে কেউ রুখতে পারবে না। এনবিআরের বিলুপ্তি রোধে আমাদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমরা বিসর্জন দিতে রাজি আছি।
আজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবন অবরুদ্ধ করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ১২টা থেকে এনবিআর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় এনবিআর ভবনে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়নি। এনবিআর চত্বরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। তবে ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেছে ঐক্য পরিষদ।
এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণ সহ ৪ দাবিতে গত শনিবার থেকে দ্বিতীয় দফার আন্দোলন করছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়েই সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের যাত্রার সূচনা হবে। এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে আগামী ২৭ জুনের মধ্যে অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতা বহির্ভূত থাকবে। ওইদিন সারাদেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘মার্চ টু এনবিআর’ পালিত হবে।
এতে আরও বলা হয়, দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এনবিআরের বিলুপ্তি রোধ ও একটি টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর সাথে একাত্ম এনবিআরের কোনো সদস্য থেকে শুরু করে অফিস সহায়ক পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবসর প্রদান, বদলি/পদায়ন, প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক বদলি বা যে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ট্যাক্স, কাস্টমস, ও ভ্যাট বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে। জুলাই অভ্যুত্থানের টেকসই সংস্কারের স্পিরিট ও শিক্ষা থেকে আমরা যেন বিচ্যুত না হই। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অচলাবস্থার নিরসন হবে না। তাই, এই অচলাবস্থার নিরসনে আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) ও সিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল অর্থ উপদেষ্টা। কিন্তু কর্মসূচি পালনকারী এনবিআর ঐক্য পরিষদ থেকে কোনো প্রতিনিধি সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না রাখায় উক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে না জানানো হয়েছিল গতকাল বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে।
গত ২১ জুন সংবাদ সম্মেলনে করে ২৩ জুন থেকে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকার গত ১২মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে।
এর বিরোধিতা করে গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতির আন্দোলন করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।
আমার বার্তা/এমই