চাকরি হারানোর ভয়ে ‘গণক্ষমা’র দাবি এনবিআর কর্মকর্তা পর্যায়ে
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা এখন এক গভীর সংকটে পতিত। চলমান আন্দোলন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের কারণে চাকরি হারানোর আতঙ্কে তাদের মাঝে ব্যাপক উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। একসময় অধিকার আদায়ে যাঁরা এগিয়ে গিয়েছিলেন, এখন তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝে ‘গণক্ষমা’ চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার এই সংকটময় মুহূর্তে এনবিআরের অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিততায় রয়েছেন।
গত কয়েকদিনে এনবিআরের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। একই সময়ে ৬ কর্মকর্তাকে বদলি এবং ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এসব ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মে ও জুনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে কাস্টমস অফিস ও বন্দর বন্ধ রেখে দুই দফা আন্দোলনে নামে কর্মকর্তারা। পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ২৯ জুন আন্দোলন স্থগিত হয়। তবে আন্দোলনের নেতাদের দাবি ছিল এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।
আন্দোলনে যুক্ত বেশিরভাগ কর্মকর্তা এখন গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন। অনেকে আন্দোলনের গ্রুপ থেকেও নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়া বা উচ্চপদে থাকা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া এবং অনুসন্ধানের খবর তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে যাদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা পূর্বের কমিশনার কাজী মো. জিয়াউদ্দিন, বেনাপোল কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, উপ কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদসহ আরও অনেকে। এদের অনেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
এছাড়া অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারেক রিকাবদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা, যুগ্ম কর কমিশনার মোরশেদ উদ্দীন খান, মোনালিসা সুস্মিতা, সদস্য বদিউল আলম, সাধন কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। এদের অধিকাংশই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন।
দুদক অভিযোগ করেছে, ঘুষের বিনিময়ে কর ফাঁকি দেওয়ার এবং করদাতাদের হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, সমাজে ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত এনবিআরেরই ক্ষতি করবে।
গত ১ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত হন। পরদিন চার সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়—তারা হলেন ড. আবদুর রউফ, হোসেন আহমদ, আলমগীর হোসেন ও শাব্বির আহমেদ। সরকার জানায়, তারা চাকরিজীবনে ২৫ বছর পূর্ণ করায় ‘জনস্বার্থে’ অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ২১ ও ২২ জুন আরও ৬ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারি করলেও আন্দোলনের চাপের মুখে ২৫ মে সরকার ঘোষণা দেয়, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না, বরং আরও শক্তিশালী করা হবে। এরপর আন্দোলন প্রত্যাহার হলেও এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পরে সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তায় তিনি অফিসে ফেরেন। ২৯ জুন রাজস্ব সংস্কারে উপদেষ্টা কমিটি গঠনের পর আন্দোলন স্থগিত হয়।
বর্তমানে এনবিআরের ভবিষ্যৎ সংস্কার ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণের জন্য এই অস্থিরতার শেষ পরিণতি কী হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
আমার বার্তা/এল/এমই