শিল্পখাতে জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে অভ্যাসগত পরিবর্তনের তাগিদ
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

শিল্পের টেকসই ভবিষ্যৎ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার ও সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশিষ্ট শিল্প ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত "বাংলাদেশের শিল্পখাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি" শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভা সোমবার (২৮ জুলাই) ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)'র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে আমাদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। মানসম্পন্ন ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশ। তিনি শিল্প-কারখানায় নিয়মিত 'এনার্জি অডিট' বাস্তবায়নের পাশাপাশি খাতভিত্তিক গবেষণা ও 'ইন্ডাস্ট্রি ম্যাপিং'-এর আহ্বান জানান।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের বিদ্যমান জ্বালানি পরিকল্পনায় দক্ষতা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, এটি জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানির উৎস ও সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, একইসাথে পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
বিইপিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, জ্বালানি সম্পর্কিত তথ্য প্রচারে ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি খাতের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে গবেষণায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, এসএমই খাত জ্বালানি সংকটে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের আহ্বান জানান এবং জানান, বর্তমানে প্রায় ২৫০টি তৈরি পোশাক কারখানায় সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল আলম বলেন, সরকার প্রতি কিউবিক এলএনজিতে ৬৫-৭০ টাকা ব্যয় করলেও বিক্রি করছে ৩০ টাকায়। জনগণের সচেতনতায় ৫-১৫% জ্বালানি সাশ্রয় সম্ভব বলেও জানান তিনি।
বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ২০৫০ সাল নাগাদ শিল্পখাতে জ্বালানির ব্যবহার ৪০% ছাড়িয়ে যাবে। সাশ্রয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে কম খরচে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মত দেন।
পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক মো. ইমাম উদ্দিন শেখ জানান, প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসানুল আমিন জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলেন, এলএনজি আমদানিতে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং এলএনজি নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে জ্বালানি বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে সবুজ অর্থায়নের বিস্তার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তারা।
বিজিএমইএ’র ইনামুল হক খান জানান, গাজীপুরে প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্পে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। ১০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার হলে ২২০ মেগাওয়াট সাশ্রয় সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সানেম একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে যেখানে জ্বালানি দক্ষতার বাস্তবচিত্র, প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা এবং সরবরাহ অনিয়মের কারণে দক্ষতা হ্রাসের চিত্র তুলে ধরা হয়।
ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, শিল্প উদ্যোক্তা ও গবেষকরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় শিল্পে প্রযুক্তি হস্তান্তর, সবুজ অর্থায়ন, রিনিউয়েবল এনার্জির প্রসার এবং সাশ্রয়ী উৎপাদন নিশ্চিতকরণে সমন্বিত নীতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই