হালাল শিল্পের উন্নয়নে সমন্বিত ইকোসিস্টেম নিশ্চিত জরুরী: ঢাকা চেম্বার
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বর্তমানে হালাল পণের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম, একটি কার্যকর হালাল ইকোসিস্টেমের অনুপস্থিতির পাশাপাশি দেশে হালাল পণ্যের এ্যাক্রিডিটেড সার্টিফিকেট প্রদানে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ না থাকার কারণে এখাতের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন, ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশের হালাল শিল্পখাতের উন্নয়ন; সমস্যা ও সম্ভাবনা” শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী বলেন, অর্থনীতির দ্রুত-বর্ধনশীল ও সম্ভাবনাময় হালাল খাতের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩৪ সালে এটি ৯.৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে, অথচ বাংলাদেশ মাত্র ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি করে, যার বেশির ভাগই কৃষিভিত্তিক পণ্য। হালাল শিল্পের বিশাল সম্ভাবনাময় হলেও, বাংলাদেশের সামনে একাধিক কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ থাকায় এখাতের বিকাশ কাঙ্খিত মাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায়ে না রাখা, লজিস্টিক অবকাঠামোর স্বল্পতা, শুল্কহার ও সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জটিলতা, আধুনিক পরীক্ষাগারের অপ্রতুলতা, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তির অভাব সহ সার্বিকভাবে হলাল ইকোসিস্টেম না থাকার বিষয়টি এখাতের কাঙ্খিত উন্নতিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন রাজিব চৌধুরী। এছাড়াও দেশের হালাল সার্টিফিকেটের বৈশ্বিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার স্থাপনের সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগের আহ্বান জানান রাজিব এইচ চৌধুরী।
উক্ত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজি (আইইউবিএটি)’র মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিএসটিআই দুটো প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের সনদ প্রদান করে, যা অনেকেক্ষেত্রে জটিলতার তৈরি করছে। পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, দেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজে পিছিয়ে থাকা, এখাতে এসএমইদের অনুপস্থিতি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দেশের হালাল পণ্যের ইতিবাচক ইমেজের অভাব, সমন্বিত নীতিমালার অনুপস্থিতি, দক্ষ জনবলের স্বল্পতার পাশাপাশি কাঠামোগত সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থা না থাকার বিষয়সমূহ এখাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে, তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর মহাপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মোঃ আরিফুল হক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর মহাপরিচালক বেবী রাণী কর্মকার, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই)’র উপ-পরিচালক (হালাল সার্টিফিকেশন) এসএম আবু সাইদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মোঃ আবু সালেহ পাটোয়ারী, বেঙ্গল মিটের হেড অব সাপ্লাইচেইন এজিএম সায়েদুল হক ভূইয়্যা, মেটামরফোসিস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিক এম আলম এবং প্যারাগন গ্রুপের সহকারী ম্যানাজার (এক্সপোর্ট) মোঃ আবুল কালাম আজাদ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
মোঃ আবুল কালাম আজাদ, তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক হালাল পণ্যের ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রদান ও পণ্য উৎপাদন কমপ্লায়েন্স অডিটের মাধ্যমে মান নিশ্চিতের উপর জোরারোপ করেন। সায়েদুল হক ভূইয়্যা বলেন, হালাল পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং ব্লকচেইনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পশুর জীবন বৃত্তান্তের তথ্য সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবী, সেই সাথে দেশে হালাল সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকভাবে এ্যাক্রিডিটেড হতে হবে। ডা. মোঃ আবু সালেহ পাটোয়ারী জানান, বাংলাদেশে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান সরকারের একক কোন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই, তাই সংশ্লিষ্ট বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সনদ প্রদান করা হচ্ছে এবং হালাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষকরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নজরদারী বাড়ানো জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ইপিবি’র বেবী রাণী কর্মকার জানান, হালালের বৈশ্বিকবাজার প্রতিবছর প্রায় ১২.৮% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সম্ভাবনাময় এখাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। বিডা’র মহাপরিচালক মোঃ আরিফুল হক জানান, এলসিডি পরবর্তী সময়ে রপ্তানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনায় হালাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং হালাল খাতের উন্নয়নে একটি বিশেষ অর্থনৈতক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, হালাল খাতের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তবে সকলের সমন্বিত উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এখাতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ্ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। এম আবু হোরায়রাহ্ বলেন, গ্রামীন অর্থনীতি এখন অনেক সমৃদ্ধ এবং গ্রামীণ মহিলারাও এখন অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। যদি পশু পালনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদের নারীদের অতি অল্প সুদে ক্ষুদ্র আকারে প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে হালাল খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর হতে পারবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সরকারি-বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই