বাড়তি মাশুলের সমাধান না হলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের হুঁশিয়ারি

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করে পোর্ট ইউজার্স ফোরাম

এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ট্যারিফ সমস্যার সমাধান না হলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নেভি কনভেনশন হলে পোর্ট ইউজার্স ফোরামের প্রতিবাদ সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবায় অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপের প্রতিবাদে এ সভা করে সংগঠনটি।

আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান না হলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে। সারা বাংলাদেশের মানুষ বন্দরের সঙ্গে জড়িত। বন্দর বন্ধ হলে সারাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের লাইফলাইন। এ বন্দরকে সামনে রেখে দেশের বাজেট হয়।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ৪০০ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে, আমরা কি মগের মুল্লুকে বাস করছি? এটা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা হতে দেবো না। কোনো কারণে যদি চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয় তাহলে যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা দায়ী থাকবেন, আমরা ব্যবসায়ীরা দায়ী থাকবো না।

স্বাগত বক্তব্যে এমএ সালাম বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। ৮৫ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। বন্দরের নতুন ট্যারিফে ব্যবসায়ীরা ইনসিকিউরড ফিল করছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সমস্বরে না বললে সমাধান হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর সেবাকেন্দ্র, লসে নেই। আড়াই-তিন হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কেন এত কারসাজি। ট্রেইলার ধর্মঘট শুরু হয়েছে, আমাদের কনটেইনার যাবে না। স্টেক হোল্ডারদের ডেকে বন্দরের ট্যারিফ শিডিউল পুননির্ধারণ করার দাবি জানাই।

বিজিএমইএ’র পরিচালক এম ডি এম মহিউদ্দিন বলেন, বন্দরে ট্যারিফ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটে গেছে। ঘর ভাড়া, দোকান ভাড়ার নীতিমালা আছে। বন্দরের নতুন ট্যারিফে ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানাই। আমেরিকার ট্যারিফ নিয়ে সুখে নেই আমরা। এর মধ্যে বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধি কাম্য নয়।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দর কোনো কোনো ক্ষেত্র ৪৪০ শতাংশ ট্যারিফ, চার্জ বাড়িয়েছে। কস্ট বেইজড ট্যারিফ হওয়া উচিত। শিপ ওনার চার্জ বাড়িয়ে দেবে। শিল্প বাণিজ্য ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হবে। ট্যারিফ বাড়াতে হলে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে বাড়াতে হবে।

বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল বলেন, আমাদের ১২ হাজার গাড়ি আছে বন্দরে। বন্দরের উন্নতির পেছনে আমাদের কিছু ভূমিকা আছে। ২-৩ হাজার টাকায় ট্রিপ মেরে ৫০০ টাকা আয় হয় না, আমার ওপর ৩০ হাজার টাকা আয়কর। বন্দরের নতুন ট্যারিফ শিডিউলে ৫৭ টাকার গেট পাস ২৩০ টাকা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বন্দর ৫৭ টাকার পাসের ফি ২৩০ টাকা করেছে। বন্দরে চালকদের ওয়াশ রুম, ক্যান্টিন নেই। আমাদের ১৫ হাজার গাড়ি, ১০ হাজার শ্রমিক। বন্দর টার্মিনাল দিচ্ছে না ১৫ বছর বলার পরও। তিন ধরনের ট্যাক্স দেই। একজন মানুষ কতবার ট্যাক্স দেবে। এটা সংস্কার করা দরকার।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ট্রাম্পের ট্যারিফে পৃথিবীতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে সরকার আমেরিকা গিয়ে ট্যারিফ কমায় সেই সরকার বন্দরে ট্যারিফ বাড়ায়। এতে দেশের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এ ট্যারিফ অযৌক্তিক মনে করি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিপিজিএমইএ’র শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, লুটপাট শুরু হয়েছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে লোড আনলোডে ৬০ ডলার খরচ হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে আরও বেশি লুট হচ্ছে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, বন্দর অর্থনীতির লাইফ লাইন। এটা শেষ করতে নানান ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ১২ টাকার ফি ১১৫ টাকা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাবে। নতুন ট্যারিফ কমানো না গেলে ব্যবসায়ীদের যাওয়ার জায়গা থাকবে না। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। সিঅ্যান্ডএফের ১৩ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী এ খরচের বোঝা নিয়ে কাজ করতে অপারগ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- সাইফুল ইসলাম, শিপিং এজেন্টের শাহেদ সরওয়ার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. পারভেজ আকতার, ডব্লিউটিসির সভাপতি মোহাম্মদ শফি, বিপণি বিতান ব্যবসায়ী সমিতির শারুদ নিজাম, টায়ার টিউব ইমপোর্টারস ও ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, মোহাম্মদ ইয়াসিন প্রমুখ।


আমার বার্তা/এমই