উন্নয়ন শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়ছে: ফাহমিদা খাতুন
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

উন্নয়নের ধারা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ শিল্প ও সেবাখাতের কর্মসংস্থান কেন্দ্রীভূত ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এর ফলে অন্য অঞ্চলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সীমিত রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর এক হোটেলে অনুষ্ঠিত ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫–এর ‘দারিদ্র্য বিমোচন, বৈষম্য হ্রাস এবং খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক সেশনে তিনি এসব কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী এ সামিট যৌথভাবে আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন, ইনোভিশন, ফিনটেক সোসাইটি, ব্রেইন ও ভয়েস ফর রিফর্ম। সহযোগিতায় ছিল অ্যাকশনএইড ও বিডিজবসডটকম।
বৈষম্য বৃদ্ধির পেছনে কাঠামোগত কারণ রয়েছে উল্লেখ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেশের রাজস্বব্যবস্থা এখনো পশ্চাৎমুখী বা রিগ্রেসিভ। এছাড়া উন্নয়নের ধারা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়ছে। আমাদের শিক্ষা এখনো সার্টিফিকেট নির্ভর, যা শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত কয়েক দশকে উন্নয়নের যে ন্যারেটিভ দাঁড়িয়েছে তাতে প্রবৃদ্ধির তথ্য আমরা দেখেছি। দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে উন্নয়নের তথ্য দেখেছি। এতে বৈষম্য কমে আসার কথা। কিন্তু উন্নয়নের পাশাপাশি বরং বৈষম্য বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে না পারলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০২২ অনুযায়ী, সমাজের শীর্ষ ৫ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশের মোট সম্পদের ৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, আর নিচের ৫ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই ব্যবধান গত কয়েক দশকে আরও বেড়েছে, যা আমাদের উন্নয়নের অর্জনের বিপরীতে একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান এখনো অনানুষ্ঠানিক খাতে। যেখানে আয় কম, চাকরির নিশ্চয়তা নেই এবং সম্মানজনক জীবনযাত্রার সুযোগ সীমিত। এসব বৈষম্য বাড়িয়ে তুলছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়ে অনুষ্ঠানে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা কোনো হঠকারী বিষয় নয়। এটা ধীরে ধীরে উন্নতি করার বিষয়। যেটা গত ৫৪ বছরেও হয়নি।
প্যানেল আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য আকস্মিক নয়, এটি পরিকল্পিত। দারিদ্র্য কেবল আয়ের অভাব নয়, বরং মানুষের মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফল। উন্নয়ন মানে হলো মানুষের নিজের জীবন গড়ার স্বাধীনতা।
এসময় তিনি ঝালকাঠির রতন হালদারের গল্প তুলে ধরে বলেন, তার ছেলেরা শিক্ষিত, তবু চাকরি পাচ্ছেন না। তার বড় ছেলে সরকারি একটি প্রকল্পে চাকরি পেলেও সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে। এটাই আজ হাজারও পরিবারের বাস্তবতা।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সমান সুযোগ, বাজেট প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেই উন্নয়ন হবে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যোগ করেন ডা. তাসনিম জারা।
আমার বার্তা/এমই
