শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপিতে ধসে পড়ছে এবি ব্যাংক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে আটকে থাকা বিপুল ঋণের চাপেই ধসের মুখে পড়েছে এবি ব্যাংক। এক সময় গ্রাহকসেবায় সুনাম কুড়ানো প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকটি এখন গভীর আর্থিক সংকটে। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা মোট ঋণের ৮৪ শতাংশ।
মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই আটকে আছে বড় গ্রহীতাদের কাছে। এসব অনাদায়ী অর্থই ব্যাংকের মূলধন, প্রভিশন ও তারল্য সংকটকে চরমে ঠেলে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জরুরি তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এবি ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ৩৫ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৯৪০ কোটি বা ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল চার হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, আগে যেসব ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য ছিল, তখন তা করা হয়নি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গোপন ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করা হয়। এতেই খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। মূলত ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলেও ভালো দেখানোর জন্য এমনটি করা হয়েছিল। খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় অন্যান্য সূচকে অবনতি হয়েছে।
এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ গোপন করার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনেও উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবি ব্যাংক খেলাপিযোগ্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি না করে নিয়মিত দেখাচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সরাসরি লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর আগের তিন বছর সেপ্টেম্বরভিত্তিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি
ছিল না। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারায় বড় ধরনের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এবি ব্যাংক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতি বেড়ে হয়েছে সাত হাজার ৯২ কোটি টাকা। জুন শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল ছয় হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। মার্চে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ৫১৭ কোটি টাকা।
এদিকে, ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সংকট সামনে আসার পর আমানত তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য সহায়তা চেয়েছে এবি ব্যাংক, যেন তারা প্রতিদিনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর আগে সংকট মেটাতে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। গত ৩০ নভেম্বর নতুন করে আরো এক হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চাওয়া হয়।
আমার বার্তা/এল/এমই
