জটিল ভ্যাট আইনের কারণে কাঙ্ক্ষিত মূসক আদায় হচ্ছে না: এনবিআর চেয়ারম্যান
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ভ্যাটের বিভিন্ন রকম রেট ও ভ্যাট আইন জটিল হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মূসক আদায় সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ, ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা আমদানি নির্ভর হওয়ায় চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। এ চাপ কমাতে আয়কর ও ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে ভ্যাট ও আয়করে জোর দেয়া হচ্ছে।
তবে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট নেট ছোট হওয়ায় বড় সমস্যা রয়েছে বলেও জানান আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, ৩ কোটি টাকা থেকে টার্নওভার কমিয়ে ৫০ লাখে আনা হলেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বাড়েনি। এবার অন্তত ১ লাখ নতুন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন জটিল হওয়ায় ২০১২ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আবার নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই এবার ভ্যাট ব্যবস্থা সহজ করতে বিভিন্ন হারের পরিবর্তে একক হার বা ‘সিঙ্গেল রেট’ চালুর চেষ্টা করা হবে। ভ্যাট সহজ করা গেলে অটোমেশনও সহজ হবে-কারণ অতিরিক্ত জটিল প্রক্রিয়া মেশিনেও সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে-ভ্যাট তারা দেন না; এ ভ্যাট দেন ভোক্তারা। তাই পুরো প্রক্রিয়া যান্ত্রিকীকরণ বা অটোমেটেড করা গেলে রাজস্ব সংগ্রহ অনেক বাড়বে। জিডিপির বড় অংশকে এখনো কর-নেটে আনা সম্ভব হয়নি-সে জায়গায় কাজ চলছে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো না গেলে রাষ্ট্রীয় সেবা টেকসই হবে না। বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হলে টেকসই রাজস্ব সংগ্রহ অপরিহার্য।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাট কমপ্লায়েন্সের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বা সফটওয়্যার কেনার সক্ষমতা নেই উল্লেখ করে তিনি জানান, ভবিষ্যতে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এনবিআর নিজস্ব সিস্টেম তৈরি করে দেবে। আইন-কানুন সহজ করা গেলে এবং অডিট প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে। ভ্যাট রিফান্ড অটোমেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে-এটি চালু হলে ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, অটোমেটেড সিস্টেম থাকার পরও যদি ব্যবহার না করা হয়, তবে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। এসাইকুডা সিস্টেমেও কিছু জটিলতা রয়েছে-এগুলো দূর করা গেলে আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের আর কাস্টমসে ভিড় করতে হবে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বর্তমান ডিউটি স্ট্রাকচার রাখা যাবে না। তাই প্রতিবছর শুল্ক কাঠামো কমানোর প্রচেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে কাস্টম হাউজ রাজস্ব আদায়ের চেয়ে নিরাপত্তা ও নিষিদ্ধ পণ্য নিয়ন্ত্রণে বেশি গুরুত্ব দেবে।
তিনি আরও জানান, ব্যাংকিং খাত থেকে বড় ধাক্কা এসেছে-করপোরেট ট্যাক্সেও কাঙ্ক্ষিত আদায় হয়নি। বাজেটের আকার ছোট হওয়ায় উন্নয়ন বরাদ্দও কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব অর্জনে। তবুও সব সংকটের মধ্যেও নভেম্বরের শেষে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের ওপরে থাকবে বলে।
যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে-এবং এ বাড়তি গ্রোথ ফাঁকি রোধের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, রেভিনিউ লিকেজ বন্ধ করা গেলে ভ্যাট ও আয়কর থেকে আদায় আরও বাড়বে। একই সঙ্গে বৈষম্যহীন কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে-যিনি বেশি আয় করবেন তিনি বেশি দেবেন, আর যাদের আয় নেই-তাদের ওপর কোনো চাপ থাকবে না।
আমার বার্তা/এল/এমই
