তরুণ সমাজকে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখার আহ্বান

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৪, ১৭:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক:

তরুণ সমাজকে অসাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলেছেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা, যৌন হয়রানি বন্ধ, সম্পত্তিতে নারীর মর্যদা ও উত্তরাধিকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক মুল্যবোধসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।

শনিবার (২৫ মে) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ শীর্ষক সেমিনারে এ সব কথা বলেন তারা। বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. নুজহাত চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। বিএনপিএস’র পরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় সেমিনারে  ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএস’র সমন্বয়কারী নাসরীন বেগম।

সেমিনারে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের অপচেষ্টা করা হয়েছে। সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আজকের তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। তারা একটি সমৃদ্ধশালী বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। তরুণদের স্বপ্ন পুরণে কাজ করতে হবে। তরুণদের হাত ধরে এদেশে সাম্যতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, এখনো অর্থ বিনিয়োগ করে বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় ওয়াজের নামে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। হাজার বছর ধরে সুকৌশলে ভাষাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। ঐতিহ্যমন্ডিত সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মকে কৌশলে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম ধর্মনিরপেক্ষতার বা ইহজাগতিকতার চর্চা শুরু হয় পুর্বভারতে সম্রাট অশোকের নেতৃত্বে। আর বল্লাল সেন আমলে এর ভাঙনের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে নারীর অধিকার সকল সময়ে আদায় করে নিতে হয়েছে।

ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে একধরনের বন্দি ও সমাজকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। তাই মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা বাস্তবায়নে তরুণদের আত্মমর্যাদায় বেড়ে উঠতে হবে, কুসংস্কার থেকে দুরে থাকতে হবে এবং সাম্যের গান গাইতে হবে।

নারীর প্রতি সকল বৈষম্য বিলোপ ও সকল নাগরিকের জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠা জরুরি উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধেও নারীর অবদান অনস্বীকার্য। সংবিধানে সকল নাগরিকের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও উত্তরাধিকার আইনে তার প্রতিফল নেই।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষার্থী জান্নাতুল তুলি, মীর হৃদয়, বর্ষা আহমেদ, ওমর ফারুক, জান্নাত সুলতানা প্রমুখ।

 

আমার বার্তা/এমই