শীতে শিশুর যত্নে সরিষা তেল না লোশন

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  ডা.এস এম রাসেল ফারুক

শীতকালে শিশুর যত্নে একটু বেশি মনোযোগ দিতে হয়।  নাহলে সর্দিকাশি জ্বরসহ নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে যে বিষয় নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন তাহলো শিশুকে কি সরিষা তেল মাখানো যাবে নাকি লোশন দিতে হবে। ম্যাসাজ করা যাবে কিনা। 

তেল না লোশন
শীতে শিশুর শরীর মালিশের জন্য তেল বা লোশন জাতীয় তরল দুটোই ব্যবহার করা যাবে। তবে যেটা শিশুর জন্য আরামদায়ক হবে সেটাই বেছে নিতে হবে।  ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের শিশুর মালিশের তেলের উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, অলিভঅয়েল বা সানফ্লাওয়ার অয়েল শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর । কারণ শিশুর ত্বক যদি সংবেদনশীল হয় তবে এই তেল দিয়ে মালিশ করলে অ্যাকজিমার মত ত্বক সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

শীতে শিশুর মালিশে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারকেল তেলে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিভাইরাল।  যা ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী । আবার শিশুর ত্বক যদি শুষ্ক থাকে তাহলে শিয়া বাটার নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে শিশুর মালিশে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ শিয়া বাটার ত্বককে ভালো ময়েশ্চার করে। বাজারে অনেক ধরনের ম্যাসাজ অয়েল পাওয়া যায়। এসব তেল ব্যবহারের আগে এরমধ্যে কিকি উপাদান আছে তা দেখে নিতে হবে। ঘন সুগন্ধিযুক্ত তেল শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি,  জ্বালাপোড়া বা র‌্যাশ সৃষ্টি করতে পারে। তবে শিশুর ত্বকের জন্য  শিশু উপযোগী অপেক্ষাকৃত পাতলা ও প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণায় দেখা গেছে শিশু জন্যই সরিষার তেল বেশ উপকারী। বিশেষ করে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেতে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।  সরিষার তেল শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। শিশুর ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে না। সরিষার তেল শরীরকে উষ্ণ রাখে। বিশেষ করে শরীরে তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।  সরিষার তেলের মধ্যে কয়েকটি রসুনের কোয়া দিয়ে গরম করে সেটা ঠাণ্ডা করে শিশুর বুকে মালিশ করলে সাধারণ সর্দি কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সরিষার তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে তাই ত্বকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। তেল ফুটিয়ে নিলে অনেকটা মসৃন হয় এবং ঘনত্ব কমে যায়। তবে ব্যবহারের পূর্বে তেল পুরোপুরি ঠাণ্ডা করে নিতে হবে।  সরিষার তেলে এক চা চামচ পরিমাণ আজওয়াইন এর দানাও তেলে দিয়ে গরম করে নেয়া যায়। এই তেল শিশুর নরম ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপরকারী। শীতকালে সরিষার তেলে তুলসি পাতাও দিয়ে নিতে পারেন। লোশনও ব্যবহার করতে পারেন। তবে দেখতে হবে লোশনটা শিশুর উপযোগী কিনা। লোশনে কিকি উপকরণ রয়েছে। এছাড়া লোশনের ঘনত্ব যেন বেশি না হয়। বেশি ঘন লোশনে শরীরে ধুলাবালি জমার কারণ হতে পারে। বাজারে শিশুর জন্য যেসব লোশন রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।

শিশুর মালিশ

শিশুর পোশাক খুলে নরম কাপড় বিছিয়ে তার ওপর শিশুকে শুয়ে দিন । হাতের তালুতে সামান্য তেল নিয়ে কানের লতিতে দিন। এরপর আস্তে আস্তে পা থেকে ধীরে ধীরে মালিশ শুরু করুন। হাতের তালুতে সামান্য তেল নিয়ে শিশুর পায়ের তলায় আঙ্গুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করুন। পায়ের গোড়ালি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত হালকা হাতে তেল দিন। এবার ধীরে ধীরে পায়ের উপরের দিকে উঠুন। পুরো শরীরেই তেল লাগিয়ে আলতো হাতে ঘষে ঘষে মালিশ করে বুক ও পেটে আঙ্গুল ঘুরিয়ে মালিশ করুন। মালিশ করার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না। দ্বিতীয়বার মালিশের সময় পা থেকে শুরু না করে মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত যান।

লেখক পরিচিতি :

ডা.এস এম রাসেল ফারুক 
সহকারী অধ্যাপক 
চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ 
 আইচি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,ঢাকা।