চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৯:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

  ডা. লুবনা খন্দকার:

চুল পড়া একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা। প্রতিদিন অনেক রোগী আসেন এই সমস্যা নিয়ে । গড়ে প্রাপ্ত বয়স্কের মাথায় প্রায় ১০০,০০০ থেকে ১৫০,০০০ চুল থাকে এবং তাদের মধ্যে প্রতিদিন ১০০ টি চুল পড়ে। সাধারণ পরিস্থিতিতে, মাথার ত্বকের চুল প্রায় তিন বছর বেঁচে থাকে (অ্যানাজেন পর্যায়);  তারপরে তারা টেলোজেন বা বিশ্রামের পর্যায়ে প্রবেশ করে।  তিন মাসের টেলোজেন সময়কালে চুলের গোড়াটি উঠে যায়, তারপরে চুল পড়ে যায়।  তাই প্রতিদিন প্রায় ১০০ টি চুল কমে যাওয়া স্বাভাবিক। চুলের জীবচক্রের  এই বিশ্রামের পর্যায়ের শেষে চুলগুলি পড়ে যায় এবং একটি নতুন চুল এটি প্রতিস্থাপন করে এবং ক্রমবর্ধমান চক্রটি আবার শুরু হয়।সাধারণত, প্রায় ১০% মাথার চুল টেলোজেন পর্যায়ে থাকে। তবে বেশ কয়েকটি পরিস্থিতিতে চুলের বৃদ্ধির ছন্দকে পরিবর্তিত করে ফলস্বরূপ, ৩০%- ৪০% চুল যেতে পারে টেলোজেনে।  তিন মাস পরে, মাথার চুলে বড় আকারের পরিবর্তন আসে। চুল পড়া সমস্যা দেখা যায়।

নতুন চুল সাধারণত হারিয়ে যাওয়া চুল প্রতিস্থাপন করে তবে এটি সবসময় ঘটে না । চুল পড়ে যাওয়া বছরের পর বছর ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে পারে বা হঠাৎ ঘটতে পারে।  চুল পড়া স্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে।

চুল পড়ার অনেক ধরণের কারন রয়েছে, কারণ খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

  • চুল পড়ার সর্বাধিক সাধারণ কারণ হ'ল বংশগত অবস্থা যা বয়সের সাথে বা বার্ধক্যের সাথে ঘটে।
  • চুল পড়া সাধারণভাবে কোনও রোগের লক্ষণ নয় তবে থাইরয়েড ডিজিজ( যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম), রক্তাল্পতা, মাথার ত্বকের দাদ  চুলের ক্ষতি করতে পারে।
  • কিছু ওষুধ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্থাইটিস, গাউট, ডিপ্রেশন, হার্ট ডিজিজের চিকিৎসায় ব্যবহার হয় কিন্তু চুল পড়ার জন্য দায়ী ।
  • এছাড়াও ক্যান্সার কেমোথেরাপির মতো কিছু ওষুধের ফলে অস্থায়ী ভাবে চুলের ক্ষতি হতে পারে।  ওষুধগুলি বন্ধ করা হলে চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।  
  • কিছু ক্ষেএে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে বা মেনোপজের সময় হরমোনের প্রভাবে মহিলাদের চুল পাতলা  বা পড়ে যেতে পারে।
  • গর্ভনিরোধক বড়ি বন্ধ করা, পলিসিষ্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদি হরমোন ভারসাম্যহীনতার  কারণগুলিও মহিলাদের চুল পড়ার সাথে জড়িত।
  • সাধারণ টাক/বলডিং (অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া) পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে ঘটে এবং এটি জিনগতভাবে সংবেদনশীল চুলের ফলিকলের টেস্টোস্টেরন বিপাকের প্রভাবের কারণে ঘটে।
  • তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, বিশেষ করে জ্বর থাকলে, এইডস রোগ, অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনা এবং মানসিক চাপ( পরিবারের কারো মৃত্য) চুল পড়ার সাথে জড়িত ।
  • হঠাৎ ওজন হ্রাস, অস্বাভাবিক ডায়েট নিয়ন্ত্রন  অথবা পুষ্টির ঘাটতি যেমন আমিষ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার জন্য দায়ী।
  • মাথার ত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের রোগ যেমন মাথার সোরিয়েসিস, লাইকেন প্লানাস, সেবোরিক একজিমা, লুপাস ইরাইথেমাটোসাস জাতীয় চর্মরোগ চুল পড়ার সাথে জড়িত ।
  • চুলের স্টাইল জনিত কারন যেমন চুল সোজা করা/আয়রনিং করা, চুলে বাহ্যিক রঙ  করা, চুল শক্ত করে দীর্ঘ সময় বেধে রাখা চুলের পড়ার জন্য দায়ী ।
  • হট অয়েলিং হেয়ার চিকিৎসা, অনেকের চুল টেনে টেনে উঠানোর অভ্যাস এবং মানসিক আঘাতে চুল ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।
  • মাথার ত্বকের বিশেষ চুলের ফলিকলগুলির অটোইমিউন সিস্টেম  ধ্বংস দ্বারাও থোকা থোকা ভাবে চুল পড়ে যেতে পারে।

উপদেশ:

  •  আশাহত হওয়া যাবেনা ।
  •  চুল পড়ার কারন খুজেঁ বের করতে হবে এবং প্রয়োজনে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
  •  প্রতিদিন গোসলের আগে এবং  রাতে ঘুমানোর আগে চুল আচড়াতে হবে।
  •  মাথার তালু পরিস্কার রাখতে হবে, মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে দুইদিন মাথার তালু এবং চুল পরিস্কার করতে হবে।
  •  সুষম খাবার খেতে হবে।
  •  পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  •  রাতে আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
  •  দৈনিক শরীর চর্চা করতে হবে।
  •  সর্বোপরি, মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ।

 

আমার বার্তা/এমই