হলি ফ্যামিলিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের প্রেতাত্মা এখনো বিরাজমান
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ প্রতিবেদক:
রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি দিয়ে কিছু পোস্টার ও ব্যানার টানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই পোস্টার ও ব্যানারটি কে বা কারা ছিঁড়ে ও পুড়িয়ে ফেলেছে। এ নিয়ে আন্দোলনকে সমর্থন করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বেড়ে চলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকির বিষয়টি।
গত দুদিন ধরে সরেজমিনে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামীপন্থি যেসব শিক্ষক এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছিল তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। বরং সে সময় যারা আহত আন্দোলনকারীদের সহায়তা করেছিল ওইসব শিক্ষার্থীর ওপর এখন নেমে এসেছে চরম নিপীড়ন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দিয়ে চিকিৎসা সেবায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদান করে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজের এক অধ্যাপক বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে ও ব্যানার পুড়িয়ে মানুষের মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগ সেটিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। যারা গত ১৫ বছর ধরে মেডিকেল কলেজটিতে স্বেচ্ছাচারিতার আঁতুরঘর বানিয়ে রেখেছিলেন তারাই এ কাজটি করেছেন। তারা আমারই ছাত্র বা সহকর্মী। তাদের এ ধরনের কাজে খুব ব্যথিত হয়েছি, এটি ছাত্র-জনতার কাছে আমাদের ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানও নষ্ট করেছে।
তিনি আরও বলেন,জুলাই ,২৪ এর গণ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক হামলা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে আওয়ামীলীগ এর ভাতৃপ্রতিম অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কে রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু, ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই নিষিদ্ধ সংগঠনটির অপতৎপরতা এখনো বিরাজমান।
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ভুক্তভোগী একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান,"উক্ত হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসক 'মমতাজ আরা মায়া' বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ও তার সহযোগী দ্বারা মানসিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং উনাকে বিভিন্ন ভয়ভীতির হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালটিতে কর্মরত ভুক্তভোগী ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান উনি হাসাপাতালের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে একটি অভিযোগ পত্র জমা দেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করেন।" পরে নিজের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই ভুক্তভোগী ইন্টার্ন চিকিৎসক রমনা থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক মমতাজ আরা মায়া বলেন, আমি কখনো কোনদিন কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। কারো সাথে আমার মতবিরোধ হতে পারে, কিন্তু সেটা যে এতটা দূর পৌছবে এটা আমি ভাবতে পারিনি। এক কথায় আমি কারো সাথে খারাপ আচরণ করিনি। আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম। এখন আমি বিয়ে করেছি। অতএব আমার ছাত্রলীগ করার এখতিয়ার নেই।
এদিকে বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মুজিবুল হক। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছে। আমরা বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।
আমার বার্তা/এম রানা/এমই