হৃদরোগীদের জন্য নিরাপদ সমাধান আবিস্কার করলেন বিজ্ঞানীরা

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

একটি ছোট্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তবে বিজ্ঞানীরা এবার একেবারেই অন্যরকম কিছু তৈরি করেছেন, এক দানা চালের চেয়েও ছোট পেসমেকার, যা তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে!

এই পেসমেকার শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো যায়। কোনো রকম তার বা অতিরিক্ত যন্ত্র ছাড়াই আলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো- কাজ শেষ হয়ে গেলে এটি নিজেই শরীরে গলে যায়! অর্থাৎ, অপসারণের জন্য কোনো সার্জারি লাগবে না।

গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সমাধান তৈরি করা। অনেক নবজাতক জন্মের পর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে, যেখানে সাময়িকভাবে পেসমেকার বসানোর দরকার হয়। এই নতুন ক্ষুদ্র পেসমেকারটি অস্ত্রোপচারের ঝামেলা ছাড়াই শিশুদের জন্য কার্যকর হতে পারে। শুধু শিশুরাই নয়, হার্ট সার্জারির পর অনেক বড়রাও সাময়িক পেসমেকারের উপর নির্ভরশীল। নতুন এই প্রযুক্তি তাদেরও সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যারা জটিল অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চান না।

বর্তমানে অস্থায়ী পেসমেকার বসানোর জন্য রোগীর বুকের ভেতরে তার (ওয়্যার) দিয়ে সংযুক্ত করা হয়। এই তারগুলো পরে টেনে বের করতে হয়, যা অনেক সময় হৃদপিণ্ডের টিস্যুতে ক্ষতি করে।এই পদ্ধতির একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল নিল আর্মস্ট্রংয়ের ক্ষেত্রে। চাঁদে পা রাখা প্রথম মানুষটি ২০১২ সালে তার অস্থায়ী পেসমেকার সরানোর পর অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যান।

কিন্তু নতুন ক্ষুদ্রতম পেসমেকারটি সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস এবং কাজ শেষ হয়ে গেলে নিজেই শরীরের মধ্যে মিশে যায়। মাত্র ১ মিলিমিটার পুরু ও ৩.৫ মিলিমিটার লম্বা এই যন্ত্রটি একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো সম্ভব।

এই অত্যাধুনিক পেসমেকার রোগীর বুকের ওপর পরিধানযোগ্য একটি নরম প্যাচের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যদি হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়, এই প্যাচটি আলোর সংকেত পাঠিয়ে পেসমেকারকে নির্দেশ দেয় কতবার হৃদপিণ্ড স্পন্দিত হবে।

এর শক্তি আসে গ্যালভানিক সেল নামক প্রযুক্তি থেকে, যা শরীরের তরলের মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে এবং হৃদপিণ্ডকে উদ্দীপিত করে।গবেষকরা ইতোমধ্যে এই পেসমেকারটি ইঁদুর, শূকর, কুকুর, এমনকি পরীক্ষাগারে হৃদযন্ত্রের টিস্যুর ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করেছেন।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী বোজি তিয়ান, যিনি নিজেও আলো-নিয়ন্ত্রিত পেসমেকার নিয়ে গবেষণা করেছেন, এই নতুন উদ্ভাবনকে ‘একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেন, ‘এটি শুধু অস্থায়ী পেসমেকারের ধারণাকেই বদলে দেবে না, বরং স্নায়ু পুনর্জন্ম, ক্ষত নিরাময় এবং স্মার্ট ইমপ্লান্টসহ চিকিৎসার অনেক ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগ এখনো বিশ্বে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। এই ক্ষুদ্রতম পেসমেকার যদি সফলভাবে মানুষের জন্য কার্যকর হয়, তাহলে এটি হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, বিশেষ করে হার্ট সার্জারির পর সুস্থ হওয়ার সময় ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

আমার বার্তা/এল/এমই