আরজি কর মামলার সাজা: আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে সঞ্জয়কে
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:১৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বহুল সমালোচিত আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে একমাত্র দোষী ঘোষণার পর এবার তার সাজা দেওয়া হলো। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সোমবার (২০ জানুয়ারি) শিয়ালদহ আদালতের বিচারক সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
সাজা ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, ‘আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।’ এর আগে আদালত শনিবার ঘোষণা করেছিল, সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় এই ঘটনার জন্য দোষী। তিনিই ধর্ষক ও খুনি।
দোষীর আমৃত্যু কারাদণ্ড ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সব মিলিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। জরিমানার টাকা না দিলে পাঁচ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে ভুক্তভোগীর বাবা জানান, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। তার উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেও ও হাসপাতালের ইমারজেন্সি ভবনের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ। জানা যায়, নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে সেই তরুণীকে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, রায়ের দিনও আদালতে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ। যদিও তাতে আদালত কোনো কর্ণপাত করেননি। তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আর সর্বনিম্ন সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন।
শিয়ালদহ আদালতে 'ইন-ক্যামেরা ট্রায়াল'-এ (রুদ্ধদ্বার বিচারপ্রক্রিয়া) বায়োলজিক্যাল প্রমাণের ওপর নির্ভর করে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ডিএনএ নমুনা, ভিসেরা রিপোর্ট, টক্সিলজি রিপোর্ট, লেয়ারড ভয়েস অ্যানালিসিসের মতো বিভিন্ন প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে সঞ্জয়কে মূল অভিযুক্ত হিসেবে তুলে ধরে সংস্থাটি।
সিবিআই দাবি করেছে, ভুক্তভোগীর দেহে ডিএনএ'র যে নমুনা পাওয়া গেছে, তা সঞ্জয়ের সঙ্গে মিলে যায়। ঘটনার সময় নিজেকে রক্ষার চেষ্টাও করেছিলেন ভুক্তভোগী। সঞ্জয়ের শরীরে সেরকম পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অপরাধস্থল থেকে যে চুল উদ্ধার করা হয়েছে, তাও সঞ্জয়ের বলে প্রমাণ মিলেছে।
তাছাড়াও ফোনের লোকেশন, ব্লুটুথ ডিভাইসের মতো বিষয় থেকেও ঘটনাস্থলে সঞ্জয়ের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেসব পারিপার্শ্বিক এবং বায়োলজিক্যাল প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তকারী সংস্থা জানায়, ‘বিরল থেকে বিরলতম’ অপরাধ ঘটেছে। তাই সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার আহ্বান করে সিবিআই।
তবে সঞ্জয়ের আইনজীবী দাবি করেছেন, ৯ আগস্ট যেখান থেকে তরুণী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি এমন একটি জায়গা যেখানে ২৪ ঘণ্টা লোক থাকেন। সেই পরিস্থিতিতে সকলের নজর এড়িয়ে চুপচাপ সেমিনার হলে ঢুকে কারও নজরে না পড়ে ২৮ মিনিটের মধ্যে ধর্ষণ এবং খুন করা সম্ভব নয়।
নির্যাতিতার বাবা-মা দাবি করে, সঞ্জয়ের পক্ষে একা সেই কাজ ঘটানো সম্ভব নয়। সেই ঘটনায় আরও অনেকে যুক্ত আছে। সিবিআইয়ের তদন্ত এখনো অর্ধেক হয়েছে। এমনকি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বেড়েছে ১৩ ডিসেম্বর থেকে। কারণ নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে না পারায় সেদিন ধর্ষণ ও খুনের মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পেয়ে যান। সেই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা এবং সাধারণ মানুষও।
আমার বার্তা/এমই