গাজা দখল করে 'ফ্রিডম জোন' তৈরি করতে চান ট্রাম্প
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ১১:০২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ফের ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখল করার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কাতারের রাজধানী দোহায় একটি অনুষ্ঠানে গাজা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ভালো হবে। এরপর সেখানে 'ফ্রিডম জোন' তৈরি করা হবে। এতে সেখানে সব মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ১১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলকে 'গণহত্যাকারী' হিসেবে অভিহিত করে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে স্পেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'গাজার জন্য আমার পরিকল্পনা আছে। যেগুলো আমি মনে করি ভালো। চলুন গাজাকে একটি ফ্রিডম জোন হিসেবে তৈরি করি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হতে দিন। আমি খুবই গর্বিত হব, যদি গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র নেয় এবং এটিকে একটি ফ্রিডম জোনে পরিণত করে। ভালো কিছু হতে দিন। মানুষকে এমন বাড়িতে রাখুন, যেখানে তারা নিরাপদে থাকবে। গাজার সমস্যা কখনো সমাধান করা হয়নি। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে আগে হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দখলদার ইসরায়েলে চালানো হামাসের অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড নিয়েও মন্তব্য করেন। ট্রাম্প দাবি করেন, এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখুন, বিশ্বের ইতিহাসে ৭ অক্টোবর ছিল অন্যতম খারাপ দিন। আমি মনে করি শুধু এই অঞ্চলে নয়, এটি ছিল (পুরো বিশ্বে) সবচেয়ে নৃশংস হামলা, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।
এদিকে গাজায় বুধবার মধ্যরাতে ১২টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের।
হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার দিকে খান ইউনিস থেকে ৫৬ জন, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে চার জন এবং মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল। মুখপাত্র আরো জানান, খান ইউনিসের ১৩ সদস্যের সামুর পরিবারের নাম নাগরিক নিবন্ধন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর পাশাপাশি উত্তরে বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজা সিটির বাসিন্দাদের ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) 'তীব্র হামলা' শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য চলে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষভাবে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, আল-শিফা হাসপাতাল এবং তিনটি স্কুল খালি করার কথা বলেছে ইসরায়েল।
তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে এবং এই এলাকাগুলো থেকে তাদের সরিয়ে নিতে সময় লাগবে। এতে বিপুলসংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলকে প্রথম বারের মতো 'গণহত্যাকারী রাষ্ট্র' বলে আখ্যা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে স্পেনের কাতালান রাজ্যের এমপি গ্যাব্রিয়েল রাফিয়ান ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য সানচেজের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনাও করেন তিনি।
সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় নিজ বক্তব্যে সানচেজ বলেন, 'আমি এখানে একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জনাব রাফিয়ান একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা আর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখছি না। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য হবে না।'
এমপি গ্যাব্রিয়েল রাফিয়ান স্পেনের বামপন্থি রাজনৈতিক দল সুমার পার্টির একজন নেতা। এই দলটির সঙ্গে জোট রয়েছে সানচেজের নেতৃত্বাধীন স্প্যানিশ সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির। স্পেনের বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্দা দিয়াজ সুমার পার্টির শীর্ষ নেতা।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করে স্পেন। তবে বুধবারেই এই তথ্য প্রথম জনসমক্ষে আনলেন সানচেজ। এদিকে ইসরায়েলি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের বুধবারের মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে কর্মরত স্পেনের রাষ্ট্রদূত আনা সলোমনকে তলব করে কড়া বার্তা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান
আমার বার্তা/জেএইচ