মালদ্বীপ-করাচির অদূরে লাক্ষাদ্বীপে সেনাঘাঁটি করছে ভারত

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৬:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

দক্ষিণ ভারতের প্রান্তে কেরালার উপকূলে ৩৬টি ছোটবড় দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ। সেই দ্বীপপুঞ্জেরই ছোটো একটি দ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়তে চলেছে নয়াদিল্লি।

ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। দ্বীপে জারি করা হয়েছে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি। সেখানে বলা হয়েছে, ওই দ্বীপটিকে প্রতিরক্ষা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে।

লাক্ষাদ্বীপের ৩৬টি দ্বীপের মধ্যে মাত্র ১০টি দ্বীপ বাসযোগ্য। এই ১০টি দ্বীপের মধ্যে একদম উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের দ্বীপটির নাম বিত্রা। এই দ্বীপকে কেন্দ্র করেই আপাতত এগোচ্ছে নয়াদিল্লির চিন্তাভাবনা। বিত্রায় মোট ১০৫টি পরিবারের বাস। কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলটির রাজস্ব দপ্তর গত ১১ জুলাই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বিত্রায় দ্বীপটিকে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই দ্বীপের অবস্থান এবং জাতীয় নিরাপত্তায় তার প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। বিত্রা দ্বীপকে শিগগিরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

কৌশলগত দিক থেকে অবশ্য লাক্ষাদ্বীপ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। আরব সাগরে অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ এই দ্বীপের পাশ দিয়ে যাতায়াত করে। সামুদ্রিক পরিবহণে এখান থেকেই নজরদারি চালানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন নৌ অভিযানের ক্ষেত্রেও লাক্ষাদ্বীপের গুরুত্ব রয়েছে। এর অদূরে রয়েছে মালদ্বীপ, যা ভারতের প্রতিবেশী স্বতন্ত্র দ্বীপরাষ্ট্র। সম্প্রতি মালদ্বীপের সরকারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগ, মালদ্বীপের মাধ্যমে ভারতের দক্ষিণ উপকূলে নজরদারি চালায় বেইজিং। ফলে তার বিপরীতে লাক্ষাদ্বীপকে শক্তিশালী রাখা প্রয়োজন।

এ ছাড়া, লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জের এই বিত্রা দ্বীপ থেকে আকাশপথে পাকিস্তানের করাচির দূরত্ব হাজার কিলোমিটার (যদিও জলপথে এই দূরত্ব প্রায় দ্বিগুণ)। দূরত্ব বেশি হলেও মাঝে শুধু পানি ছাড়া আর কিছু নেই। এ সমস্ত নানা কারণেই আরব সাগরের মাঝে দ্বীপটির অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সেই তাৎপর্য আরও বেড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, লাক্ষাদ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়তে পারলে তা ভারতের পক্ষে যথেষ্ট কার্যকরী হবে। আরব সাগরে নজরদারি চালাতে সুবিধা হবে এর ফলে। দেশের পশ্চিম উপকূল আরও সুরক্ষিত হবে। রাজস্ব দপ্ততরের বিজ্ঞপ্তিতেও এই কৌশলগত অবস্থানের কথা বলা হয়েছে।

এদিকেকেন্দ্রের এই পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সেখানে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেসও। বিত্রা আদিবাসী অধ্যুষিত দ্বীপ। লাক্ষাদ্বীপের কংগ্রেস এমপি হামদুল্লা সাইদ দাবি করেছেন, এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিত্রাকে কোনও ভাবেই কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে না।

তার কথায়, “এমপি হিসাবে আমি বিত্রার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বিত্রার মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। রাজনৈতিক লড়াই এবং আইনি লড়াই।”

হামদুল্লাহ সাইদের অভিযোগ, বিত্রার বাসিন্দাদের সঙ্গে সরকার কোনও রকম আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কোনও বিকল্পের সন্ধানও করেনি। কৌশলগত অবস্থানের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবং তা ঘোষণা করেছে।

“এটা মেনে নেওয়া যায় না”, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসকে বলেন সাইদ।

প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় বছর আগে ভারত এবং মালদ্বীপের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাক্ষাদ্বীপ সফরে যান। মালদ্বীপের কয়েক জন মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ভারতীয় পর্যটকেরা ওই দ্বীপরাষ্ট্র বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই সময়ে বিকল্প পর্যটনস্থল হিসাবে লক্ষদ্বীপের প্রচার এবং জনপ্রিয়তা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই লাক্ষাদ্বীপের কৌশলগত অবস্থান খবরের শিরোনামে।

সম্প্রতি পেহেলগামে জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। দুই দেশ সশস্ত্র সংঘাতেও জড়িয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সমুদ্রঘেরা পশ্চিম সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধির প্রয়োজন আরও তীব্র হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। সেই কারণেই লাক্ষাদ্বীপের কিনারায় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলার তোড়জোড়।


আমার বার্তা/এমই