লেকর্নুকে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেন ম্যাক্রোঁ

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

ফ্রান্সে টানা রাজনৈতিক নাটক ও অস্থিরতার পর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আবারও সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। মাত্র চার দিন আগে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। 

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এলিসি প্রাসাদে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন। তবে বৈঠকে চরম ডানপন্থি ও চরম বামপন্থি দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

লেকর্নুর প্রত্যাবর্তন অনেকের কাছে বিস্ময়কর। কারণ মাত্র দুই দিন আগেই তিনি জাতীয় টেলিভিশনে বলেছিলেন, “আমি এই পদটির পেছনে ছুটছি না, আমার দায়িত্ব শেষ।”
তবে এবার তার হাতে সময় খুবই কম। আগামী সোমবারের মধ্যেই তাকে সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে হবে। এলিসি প্রাসাদ জানায়, প্রেসিডেন্ট তাকে সরকার গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে লেকর্নুকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

৩৯ বছর বয়সী লেকর্নু ম্যাক্রোঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “দেশের বাজেট দ্রুত প্রণয়ন ও নাগরিকদের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানে কাজ করাই এখন আমার দায়িত্ব।”

সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজেকে নিঃস্বার্থ ও নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে বর্ণনা করা লেকর্নু বলেন, “আমি এই মিশনে সফল হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

গত এক বছরে ফ্রান্সে বাজেট ঘাটতি ও জাতীয় ঋণ কমানোর প্রশ্নে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছে। এই কারণে গত এক বছরে তিনজনের মধ্যে দুইজন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে ফ্রান্সের সরকারি ঋণ দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ১১৪ শতাংশে পৌঁছায়— যা ইউরোজোনের তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ বছর বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

লেকর্নু স্পষ্ট করে বলেছেন, কেউই রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যেতে পারবে না। ম্যাক্রোঁর মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দেড় বছর বাকি। তাই তিনি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সতর্ক করে বলেছেন— কেউ যেন এ সময় নিজের প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সামনে না আনেন।

তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়বেন। জাতীয় সংসদে ম্যাক্রোঁর কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। অথচ লেকর্নুকে আস্থা ভোটে জয়ী হতে হবে। এর মধ্যে এলাবে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা মাত্র ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে— যা তার রাজনৈতিক জীবনে সর্বনিম্ন।

ডানপন্থি ‘ন্যাশনাল র‍্যালি’ দলের নেতা জর্দান বারডেলা বলেন, ‘লেকর্নুর পুনর্নিয়োগ একপ্রকার ঠাট্টা। প্রেসিডেন্ট এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং বাস্তবতা থেকে দূরে।’ তিনি জানান, তার দল সরকার গঠনের বিরোধিতা করে অবিলম্বে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে।

লেকর্নু এরই মধ্যে সম্ভাব্য জোট গঠনের জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন গত ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু রক্ষণশীল রিপাবলিকান দলের এক নেতার আপত্তিতে তিন সপ্তাহের মধ্যেই সরকার ভেঙে যায়।

বর্তমানে মধ্যপন্থি দলগুলো একা সরকার গঠন করতে পারছে না। অন্যদিকে রিপাবলিকান দলও বিভক্ত। তাদের নেতা ব্রুনো রেতাইয়ো ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে তিনি লেকর্নুর নতুন সরকারে যোগ দেবেন না এবং মধ্যপন্থি-রক্ষণশীল জোটকে মৃত বলে অভিহিত করেছেন।

ফলে লেকর্নু এখন বামপন্থি দলগুলোর দিকেও সমর্থন খুঁজছেন। বামপন্থিদের কাছে টানতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৩ সালে পাশ হওয়া বিতর্কিত পেনশন সংস্কারের কিছু অংশ বাস্তবায়নে বিলম্ব করা হতে পারে। ওই সংস্কার অনুযায়ী অবসর গ্রহণের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর করা হয়েছিল।

তবে এতে মাক্রোঁর মধ্যপন্থি মিত্ররা ক্ষুব্ধ হতে পারেন, আবার বাম দলগুলোও এটিকে যথেষ্ট মনে করছে না। সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ে ফোর বলেন, “যেহেতু আমাদের কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। তাই আমরাও আস্থা ভোটে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারি না।”

কমিউনিস্ট নেতা ফাবিয়ান রুসেল বলেন, “ফরাসি জনগণ এখন প্রকৃত পরিবর্তন চায়, আর প্রেসিডেন্টের শিবির থেকে আসা কোনও প্রধানমন্ত্রীকে জনগণ গ্রহণ করবে না।”

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ফ্রান্সের অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বাড়ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফ্রাঁসোয়া ভিলরোয়া দ্য গালো সতর্ক করেছেন, চলমান সংকটের কারণে ফ্রান্স অন্তত ০.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে।

যদি লেকর্নু সরকার গঠনে ব্যর্থ হন, তাহলে ফ্রান্স আরও গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে— যার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও।


আমার বার্তা/জেএইচ