এবার বাংলাদেশে এলপিজিবাহী জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ইরানের পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে সহায়তা করার অভিযোগে ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক বিধি লঙ্ঘন করে পরিচালিত একটি নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাতেও জ্বালানি পণ্য সরবরাহ করা হয়েছিল।
মার্কিন অর্থ বিভাগীয় সংস্থা অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এই নতুন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে।
ওএফএসি-এর মতে, ইরানের ‘আর্থিক প্রবাহ কমানো’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার নীতির অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা জাহাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের এলপিজির দুটি চালান বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে।
এছাড়া, বর্তমানে চলমান অন্য পরিবহন কার্যক্রমের বিষয়টিও জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই চক্রের সহায়তায় ইরান বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানি করছে, যা দেশটির সরকারের জন্য একটি বড় রাজস্ব উৎস।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলি ইরানের ‘জ্বালানি রপ্তানি কার্যক্রমকে দুর্বল করার’ উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এটি ওয়াশিংটনের ‘সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের নীতির একটি ধারাবাহিক সিদ্ধান্ত।
নতুনভাবে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান—স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি।
এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২৪ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানি এলপিজি চালান পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। ওএফএসি জানিয়েছে, এদের মাধ্যমে একাধিক চালান শেষ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছেছে।’
মার্কিন অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘গ্যাস ডিওর’ ১৭ হাজার টনেরও বেশি ইরানি এলপিজি বাংলাদেশে সরবরাহ করেছিল।
এছাড়া, ২০২৪ সালের শেষ দিকে কোমোরোসের পতাকাবাহী জাহাজ ‘আদা’ (আগের নাম ক্যাপ্টেন নিকোলাস) বাংলাদেশের কিছু ক্রেতার কাছে ইরানি এলপিজি পৌঁছে দেয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সি শিপ ম্যানেজমেন্ট এলএলসি-এর মালিকানাধীন এই জাহাজটিকে সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বিএলপিজি সোফিয়া' নামের একটি ছোট জাহাজে এলপিজি খালাসের সময় গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাসে’ আগুন লাগে।
প্রায় ৩৪ হাজার টন এলপিজি বহনকারী এই জাহাজটি আইনি জটিলতার কারণে কয়েক মাস আটকে থাকার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি পায়। ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য বলছে, জাহাজটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা আছে।
যদিও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থার নাম নেই, তবে এই চালানের উল্লেখের কারণে বাংলাদেশকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি আওতায় রাখা হচ্ছে।
মার্কিন আইন অনুসারে, নিষিদ্ধ লেনদেনে জড়িত বিদেশি কোম্পানিগুলো ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’-এর ঝুঁকিতে থাকে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর মতো কঠিন পরিণতি হতে পারে।
আমার বার্তা/এমই