জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পুরোনো ও বর্তমান বিশ্বের প্রতিনিধিত্বহীন: গুতেরেস

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) এখন পুরোনো ও আজকের বিশ্বের বাস্তবতাকে প্রতিনিধিত্বহীন করে না।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট বৈঠকের ফাঁকে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে আফ্রিকার দুটি দেশ এবং এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো প্রয়োজন।

গুতেরেস বলেন, ‘পরিষদে বর্তমানে তিনজন স্থায়ী ইউরোপীয় সদস্য— ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া এবং একজন এশীয় সদস্য চীন রয়েছে। কিন্তু লাতিন আমেরিকা কিংবা আফ্রিকার কোনো সদস্যই নেই।’

তিনি আরও বলেন, পরিষদের কার্যকারিতা প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, বিশেষ করে স্থায়ী সদস্যদের হাতে থাকা ভেটো ক্ষমতার কারণে। ‘যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এমন এক প্রস্তাব দিয়েছে যাতে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে ভেটো ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আনা যায়। আমার মনে হয়, পরিষদের সদস্যদের এ প্রস্তাবটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত,’ যোগ করেন তিনি।

গুতেরেসের এই মন্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি মোহামাদ হাসানের বক্তব্যের, যিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বলেন, ভেটো ক্ষমতা সীমিত করা বা একেবারে বিলোপের সময় এসেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সাধারণ পরিষদের দিকে ফিরে আসা উচিত, যা বিশ্বের বিবেক ও কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করতে পারবে।’

জাতিসংঘ কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব

গুতেরেস আরও জানান, ২০২৬ সালের জন্য জাতিসংঘের কর্মী সংখ্যা ১৮.৮ শতাংশ কমিয়ে ১২,৬৮১ থেকে ১১,৫৯৪-এ আনার প্রস্তাবের পেছনে আর্থিক সংকট নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অর্থ প্রদানে ঘাটতিই মূল কারণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই কাটছাঁট উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তাকে প্রভাবিত করবে না, বরং উল্টোভাবে তা বাড়ানো হবে।

পুরোনো ও বৈষম্যমূলক বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো

গুতেরেস বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা পুরোনো ও বৈষম্যমূলক, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা যথাযথভাবে প্রতিফলিত করে না। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আসিয়ান অর্থনীতির আকার ও তাদের আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অংশীদারিত্বের তুলনা করলে স্পষ্ট অন্যায় চোখে পড়ে।’

গুতেরেস আহ্বান জানান, বৈশ্বিক শাসন কাঠামোকে আরও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রতিনিধিত্বমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর’ করতে হবে। ‘এর মানে হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর, বিশেষ করে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণ আরও জোরদার করা,’ বলেন তিনি।

তিনি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা তিনগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে ঋণ গ্রহণে ঝুঁকি ও ব্যয় কমে এবং ঋণ সংকটে থাকা দেশগুলো দ্রুত সহায়তা পায়।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জি২০-এর দায়িত্ব

মহাসচিব আরও বলেন, বিশ্বের ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী জি২০ দেশগুলোকে জলবায়ু কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান জানান, জলবায়ু অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করে অন্তত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ নামে পরিচিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা তহবিলে বড় অঙ্কের অর্থ দিতে। 
গুতেরেস বলেন, ‘জি২০ দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে হবে, তবে সব দেশকেই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব নিতে হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে নেতারা যেন এমন একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনায় ঐকমত্যে পৌঁছান, যা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমার মধ্যে থেকে নির্গমন কমাতে সহায়তা করবে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিবছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করবে।’ - সূত্র : যুগান্তর


আমার বার্তা/জেএইচ