পুতিন দিল্লি পৌঁছানোর আগেই ভারত-রাশিয়ার সামরিক চুক্তি অনুমোদন
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে দুদিনের সফরে নয়াদিল্লিতে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার আগেই ভারতের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি অনুমোদন করেছে রাশিয়ার পার্লামেন্ট।
রাশিয়ার স্টেট ড্যুমায় অনুমোদিত এই ‘রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অব লজিস্টিক সাপোর্ট (রেলোস)’ চুক্তির আওতায় দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরের ঘাঁটি, বন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে। যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ, ত্রাণ–উদ্ধার এবং মানবিক সহায়তামূলক অভিযানে পরস্পরকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়াই এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য।
দুই দেশের মধ্যে এই ‘রেলোস’ চুক্তি অবশ্য সই হয়ে গিয়েছিল গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। তবে সেটি মঙ্গলবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘স্টেট ড্যুমা’র অনুমোদন পেল। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন গত সপ্তাহে এই প্রস্তাব ড্যুমায় পাঠিয়েছিলেন।
ড্যুমার স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভোলোদিন বলেন, ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক “কৌশলগত ও সর্বাঙ্গীন” পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর এই চুক্তি দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা আরও বাড়াবে।
>> পুতিনের সফরে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বাণিজ্যই হবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দিল্লি আসছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সফরে সামরিক সহযোগিতা, জ্বালানি বাণিজ্য, এবং তেল–গ্যাস সরবরাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করতে প্রস্তুত—তবে সে মাত্রা নির্ভর করবে “ভারত কতদূর এগোতে চায়” তার ওপর।
তিনি আরও বলেন, ভারতের ওপর “বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ” রয়েছে; তাই মস্কো চায় দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক যেন তৃতীয় কোনো দেশের প্রভাবমুক্ত থাকে।
>> সুখোয়-৫৭ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও হতে পারে আলোচনা
রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিন–মোদী বৈঠকে সুখোয়-৫৭ (Su-57) আধুনিক যুদ্ধবিমান ভারতের কাছে বিক্রির বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ স্কোয়াড্রন রুশ উৎপাদিত সুখোয়-৩০ এমকেআই দিয়ে গড়া।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের চুক্তিতে ভারত তিনটি এস-৪০০ পেয়েছে, আরও দুটি এখনও সরবরাহ বাকি।
রাশিয়ার ফার্স্ট ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরেভ জানিয়েছেন, এস-৪০০ সময়মতোই ভারতকে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দুই দেশের যৌথ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন আরও বাড়ানোর কথাও তিনি বলেন।
শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ ক্রয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে এএনআই। ভারতের সামরিক সরঞ্জামের ৩০ শতাংশই দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া সরবরাহ করে আসছে।
>> রাশিয়ার বার্তা: ‘বল এখন ভারতের কোর্টে’
পুতিনের সফরের ঠিক আগে রাশিয়া স্পষ্ট করেছে—দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কতটা গভীরে যাবে, তার সিদ্ধান্ত এখন ভারতের হাতে।
ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মস্কো মূলত চায় নিউ দিল্লি চীনের মতোই রাশিয়ার কৌশলগত পরিসরে আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত হোক। বিশ্লেষক ভেলিনা চাকারোভা বলেন, রাশিয়ার মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়—ভারত চাইলে দুই দেশের অংশীদারিত্বে ‘কোনো সীমা থাকবে না।’
তবে ভারতীয় কূটনীতি বিশেষজ্ঞ শ্রীরাম চৌলিয়া মনে করেন, ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক মজবুত হলেও দিল্লি কখনোই রাশিয়া–চীন ব্লকে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী জোট হিসেবে নিজেকে রাখবে না। তার ভাষায়, ‘ভারত আমেরিকার প্রয়োজন ফেলে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে না, আবার রাশিয়াকেও ত্যাগ করতে পারে না।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা
আমার বার্তা/এমই
