জলবায়ু সম্মেলনের আগে জাতিসংঘের ভয়ানক সতর্কবার্তা

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

বর্তমানে কার্বন নিঃসরণ কমানোর যেসব নীতি রয়েছে, তা এতটাই অপর্যাপ্ত যে চলতি শতাব্দীতেই পৃথিবীর উষ্ণতা আরও তিন ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

চরম উষ্ণায়নের মুখে পড়তে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব, যা হতে পারে ‘নরকতুল্য’। আগামী সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কার্বন নিঃসরণ কমানোর যেসব নীতি রয়েছে, তা এতটাই অপর্যাপ্ত যে চলতি শতাব্দীতেই পৃথিবীর উষ্ণতা আরও তিন ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ অঞ্চল বছরে অন্তত এক মাস করে খরার মুখেও পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০২৩ সালে এরইমধ্যে তাপমাত্রার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার প্রভাবে তীব্র তাপপ্রবাহ, ভয়াবহ বন্যা এবং অস্বাভাবিক খরায় সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, এর জেরে জীবিকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে বহু মানুষ।
 
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ অবস্থা চলমান থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বারবারই সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব একটি ‘নারকীয়’ ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে।
 
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের এক (ইউএনইপি) রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ভবিষ্যৎ নীতিগুলো বাস্তবায়ন করলে উষ্ণায়ন তিন ডিগ্রি সীমা থেকে শূন্য দশমিক এক ডিগ্রি হ্রাস পাবে। এছাড়া, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়ার শর্তে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিশ্রুত কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা হলে তা তাপমাত্রা বৃদ্ধি তিন ডিগ্রি থেকে দুই দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনবে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিঃসরন কমাতে হবে ২২ বিলিয়ন টন; যা কিনা সারা বিশ্বে কার্বন নিঃসরনের ৪২ শতাংশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচটি দূষণকারী দেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া এবং জাপানের কার্বন নিঃসরনের সমতুল্য।
 
ইউএনইপির নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেনের মতে, এই গ্রহের সব প্রাণী এবং অর্থনৈতিক খাত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও, এর মাধ্যমে উষ্ণায়নের এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির সীমাকে বাস্তবে পরিণত করা এখনও সম্ভব। এ জন্য জলবায়ু সংকটের মূলে থাকা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

দেশগুলোকে আসন্ন কপ-২৮ সম্মেলনে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার তিনগুণ করতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর, উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করতে আরও অনেক কিছু করা দরকার বলেও মনে করেন গুতেরেস।  
 
এর আগে নভেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল যে, বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন এমনভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা পৃথিবীর কার্বনের পরিমাণকে মাত্রাতিরিক্ত করে তুলতে পারে।

‘ব্রোকেন রেকর্ড’ শিরোনামে দ্য ইউএনইপি রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদি ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার সব দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি অর্জিত হয়, তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। তবে এ লক্ষ্য অর্জন আদৌ সম্ভব কি না, প্রতিবেদনে সে বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
 
এতে বলা হয়েছে, জি-টোয়েন্টিভুক্ত দেশগুলো যারা একসঙ্গে ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী, তারা এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেকটাই উদাসীন।
 
ইউএনইপি রিপোর্টের মতোই কার্যত একই কথা জানিয়েছে গেল ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জের আরেকটি প্রতিবেদন। এটিতে বলা হয়েছে, নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নির্গমন ২০১৯ সালের চেয়ে ২ শতাংশ কমে আসবে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশের চেয়ে অনেক কম।
 
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েলের মতে, সরকার প্রধানরা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নড়বড়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের অবশ্যই আসন্ন কপে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

এবারের কপ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সিইও সুলতান আল জাবের। তিনি বলেন, ‘নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। এবারের সম্মেলনে অবশ্যই এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
 
অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক টম মিচেল বলেন,
জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতাদের আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক, আইনি এবং আর্থিক দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
 
মিচেল বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিভিন্ন চুক্তি নাবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।’ নির্গমন কমাতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে চুক্তিগুলো অবশ্যই সংস্কার করা উচিত বলে মনে করেন এই গবেষক।

আমার বার্তা/এমই