মেটাতে ইতি টানতে যাচ্ছেন ইয়ান লেকুন, গড়তে চান নিজের এআই সাম্রাজ্য

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ইয়ান লেকুন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বহু বছর ধরে গবেষণা ও নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। এবার সেই দায়িত্বের ইতি টানতে যাচ্ছেন তিনি। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, লেকুন মেটা ছেড়ে নিজস্ব এআই স্টার্টআপ গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

লেকুন শুধু মেটারই নন, বরং গোটা এআই জগতেরই এক প্রতীকী নাম। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, মেটার সিনিয়র রিসার্চার এবং ২০১৮ সালের মর্যাদাপূর্ণ এ. এম. টারিং পুরস্কারজয়ী। এই পুরস্কারকে অনেকেই ‘কম্পিউটার বিজ্ঞানের নোবেল’ বলে থাকেন। 

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মেটা ছাড়বেন এবং ইতিমধ্যে নতুন উদ্যোগের জন্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন।

লেকুনের নতুন স্টার্টআপের মূল লক্ষ্য হবে “ওয়ার্ল্ড মডেলস” নামের এক নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা। এই প্রযুক্তি এমনভাবে কাজ করে, যেন এআই তার আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে একটি ‘অভ্যন্তরীণ ধারণা’ গড়ে তোলে। ফলে সেটি কারণ–ফল সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ফলাফল অনুমান করতে সক্ষম হয়।

গুগলের ডিপমাইন্ড ও স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড ল্যাবস ইতিমধ্যে এই ধারণায় কাজ করছে। তবে লেকুনের গবেষণাকে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

লেকুনের প্রস্থান এমন এক সময় হচ্ছে, যখন মেটা তার এআই গবেষণায় বড় পরিবর্তন আনছে। ওপেনএআই, গুগল ও অ্যানথ্রপিকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি গঠন করেছে “Meta Superintelligence Labs (MSL)”। এই ইউনিটে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো থেকে অন্তত ৫০ জন প্রকৌশলী ও গবেষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

লেকুন বরাবরই বর্তমান বড় ভাষা মডেলগুলো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছেন। তিনি এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ লিখেছিলেন, “মানুষের চেয়ে স্মার্ট এআই সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের উপায় খোঁজার আগে আমাদের এমন একটি সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা অন্তত একটি বিড়ালের মতো বুদ্ধিমান।”

এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, তিনি এখনকার বাণিজ্যিক এআই দৌড়ের চেয়ে বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণাকেই প্রাধান্য দেন।

লেকুনের প্রস্থান মেটার জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। কারণ তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, বরং কোম্পানির গবেষণাভিত্তিক ভাবমূর্তির অন্যতম ভিত্তি ছিলেন। তার নেতৃত্বেই মেটার প্রাথমিক এআই গবেষণা বিভাগ গড়ে উঠেছিল।

মেটা এখনো তার পদত্যাগ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, লেকুনের নতুন উদ্যোগ আগামী দিনের এআই প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। আর মেটার জন্য এটি হবে— একটি যুগের সমাপ্তি ও নতুন অনিশ্চয়তার শুরু।


আমার বার্তা/জেএইচ