ভারতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে হোয়াটসঅ্যাপ
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের জন্য শুরু হয়েছে এক কঠিন সময়। এই দেশেই অ্যাপটির সবচেয়ে বড় বাজার। সেখানেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারত সরকার সম্প্রতি অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগসেবার ওপর নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনা হোয়াটসঅ্যাপের কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে সাধারণ ব্যবহারকারী ও ছোট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়তে পারেন।
গত মাসের শেষ দিকে নির্দেশনাগুলো জারি করা হয়। চলতি মাসে তা প্রকাশ্যে আসে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মেসেজিং অ্যাকাউন্টকে সব সময় সক্রিয় সিম কার্ডের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে।
একই সঙ্গে ওয়েব ও ডেস্কটপ সংস্করণ ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর ব্যবহারকারীকে লগআউট হতে হবে। পুনরায় ঢুকতে হলে কিউআর কোড স্ক্যান করে ডিভাইস যুক্ত করতে হবে।
সরকার বলছে, সাইবার জালিয়াতি ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত। ২০২৪ সালে ভারতে সাইবার প্রতারণায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২২৮ বিলিয়ন রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, সক্রিয় ও কেওয়াইসি-ভিত্তিক সিমের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট যুক্ত থাকলে প্রতারণা শনাক্ত সহজ হবে। বিশেষ করে ফিশিং, ভুয়া বিনিয়োগ ও ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারি ঠেকানো যাবে।
তবে ডিজিটাল অধিকারকর্মী ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের আপত্তি রয়েছে। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে বৈধ ব্যবহারকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ কেবল একটি অ্যাপ নয়। এটি দৈনন্দিন যোগাযোগের অবকাঠামো। ছোট ব্যবসার বড় ভরসাও এই প্ল্যাটফর্ম।
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫০ কোটির বেশি। তাদের ৯৪ শতাংশ প্রতিদিন অ্যাপটি ব্যবহার করেন। হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও দৈনিক ব্যবহার ৬৭ শতাংশ।
অনেক ছোট ব্যবসা একটি ফোনে সিম রেখে অন্য ডিভাইসে ওয়েব ভার্সনে কাজ চালান। নতুন নিয়মে সেই ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে। অর্ডার নেওয়া, গ্রাহক সাপোর্ট—সবই ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতি এসেছে এমন সময়, যখন ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে। নতুন ব্যবহারকারী কমছে। বিদ্যমান ব্যবহারকারী ধরে রাখাই এখন মূল লক্ষ্য।
তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী বেড়েছে ৬ শতাংশ। কিন্তু ডাউনলোড কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাপই এখন মূল চালিকাশক্তি। ২০২১ সালের তুলনায় এর ব্যবহার বেড়েছে ১৩০ শতাংশের বেশি।
এদিকে শিল্প সংগঠন ব্রডব্যান্ড ইন্ডিয়া ফোরাম সতর্ক করেছে। তারা বলছে, এই নিয়ম বাস্তবায়ন প্রযুক্তিগতভাবে জটিল। সাধারণ ব্যবহারকারীর ভোগান্তি বাড়বে।
নীতিবিশেষজ্ঞদের মতে, আইন নয়—কার্যনির্দেশনার মাধ্যমে এমন বড় সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাও হয়নি। এই নির্দেশনা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন। আইনি মানদণ্ড খুবই কঠোর। তবু বিতর্ক থামছে না।
ভারতের বাজারে হোয়াটসঅ্যাপ এখন এক মোড়ের মুখে। এই সিদ্ধান্ত অ্যাপটির ভবিষ্যৎ ব্যবহারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আমার বার্তা/এল/এমই
