বিবিএসের জরিপ: বর্তমানে দেশের ৮১ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করেন
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বর্তমান সময়ে মুঠোফোন ব্যবহার করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবু এখনো সমাজের একটি অংশ মুঠোফোন ব্যবহার করে না।
বর্তমানে দেশের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮১ জন তথা ৮১ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করেন। আবার মুঠোফোন ব্যবহার করলেও সবার নিজস্ব মুঠোফোন নেই। নিজের মুঠোফোন আছে, এমন মানুষ ৫৭ শতাংশ।
গত প্রায় দেড় দশকে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনভিত্তিক সেবার প্রসার ঘটলেও দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার এখনো অনেক কম। ৪৯ শতাংশ মানুষ নিজে ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মানুষ এখনো ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রয়ে গেছেন।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা সর্বশেষ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রয়োগ ও ব্যবহার জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি প্রতি তিন মাস পরপর এ জরিপ করে। সর্বশেষ জরিপটি করা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে। এতে ৬১ হাজার ৬৩২টি খানা (পরিবার) থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য নেওয়া হয়েছে পাঁচ বছর বা তার বেশি বয়সের নাগরিকদের থেকে।
বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। সে হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করছেন। মুঠোফোনের মালিকানা আছে ৯ কোটি ৫৯ লাখ মানুষের, আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৮ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ।
জরিপে দেখা যায়, মুঠোফোন ব্যবহারের দিক থেকে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার ৮১ শতাংশ আর নারীদের হার ৭৯ শতাংশ। তবে মুঠোফোনের মালিকানার দিক থেকে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছেন। বর্তমানে ৬৩ শতাংশ পুরুষের নিজের অন্তত একটি মুঠোফোন আছে, যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৩ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারেও নারীরা পিছিয়ে আছেন। পুরুষদের মধ্যে ৫১ শতাংশ বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন আর ৪৬ শতাংশের কিছু বেশি নারী এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, তবে সাধারণ মুঠোফোনের মালিকানা কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে দেশের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের নিজস্ব মুঠোফোন ছিল। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে এসে সেই হার কমে ৫৭ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে দেশের ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। তিন বছরে এই হার বেড়ে ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে।
ওপরের তথ্যগুলো ব্যক্তিপর্যায়ে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার এবং মুঠোফোনের মালিকানা-সংক্রান্ত। এর সঙ্গে বিবিএসের জরিপে অবস্থানভেদে খানাপর্যায়ে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মুঠোফোন, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।
৭২ শতাংশ পরিবারে স্মার্টফোন
বিবিএসের জরিপে স্মার্টফোন ব্যবহারের তথ্য খানাভিত্তিক দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে অন্তত একটি স্মার্টফোন রয়েছে। আর যেকোনো ধরনের একটি মুঠোফোন রয়েছে ৯৯ শতাংশ পরিবারে। অর্থাৎ মুঠোফোন একেবারেই ব্যবহার করছে না, এমন পরিবারের সংখ্যা হাতে গোনা (১ শতাংশের মতো)। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এমন পরিবারের হার এখন ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ। একটি পরিবারে একজন ব্যবহারকারী থাকলেই পরিবারকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ধরা হয়। এ জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের চেয়ে পরিবারে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বেশি।
২০২২ সালে দেশের প্রায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে মুঠোফোন ছিল। এ ছাড়া স্মার্টফোন ছিল ৫২ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে। তিন বছর আগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পরিবার ছিল ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ সাধারণ মুঠোফোন, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার আগের তুলনায় বেড়েছে।
জরিপে খানাপর্যায়ে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ও ল্যান্ডফোন ব্যবহারের সর্বশেষ তথ্যও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, দেশের ১৫ শতাংশ পরিবারে বর্তমানে রেডিও ব্যবহার হচ্ছে, টেলিভিশন আছে ৫৯ শতাংশ পরিবারে, কম্পিউটার রয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশের আর বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে ৯৯ শতাংশ পরিবারে।
গ্রাম ও শহরের তুলনামূলক চিত্রও পর্যালোচনা করা হয়েছে জরিপে। এতে দেখা যায়, সাধারণ মুঠোফোনের ব্যবহার গ্রাম-শহরনির্বিশেষে একেবারে কাছাকাছি, তবে স্মার্টফোনের ব্যবহার শহরে বেশি। বিবিএসের তথ্য অনুসারে, শহর এলাকার ৮১ শতাংশ পরিবারে অন্তত একটি স্মার্টফোন রয়েছে, যেখানে গ্রামের ৬৯ শতাংশ পরিবারে এখন স্মার্টফোন রয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যবহারও শহরে বেশি, ৬৪ শতাংশ। গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পরিবারের হার ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ।
আমার বার্তা/এল/এমই
