জিয়াউল গুম করে লাশের পেট কেটে নদীতে ফেলেছেন: তাজুল
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জিয়াউলের বিরুদ্ধে অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। তিনি শত শত মানুষকে গুমের পর হত্যা করেছেন। একই সঙ্গে তাদের পেট কেটে নদীনালা ও খাল-বিলে লাশ ফেলে দিয়েছেন। এমন অসম্ভব শক্তিশালী প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এ ধরনের খুনি বা দুর্ধর্ষ আসামির বিরুদ্ধে সব অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত সংস্থাকে নিজের মতো করেই মোকাবিলা করতে দিতে হবে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে গুমের দায়ে জিয়াউল আহসানের মামলার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর। জিয়াউলের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে কিছু আবেদন জমা দেন তারই বোন আইনজীবী নাজনীন নাহার। এ নিয়ে তার সঙ্গে প্রসিকিউশনের কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আদালতের কাছে যেকোনো আবেদন করতে হলে আইন-বিধান বা ধারা উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু আইনজীবীকে দিয়ে একটা ঢালাও আবেদন করেছেন জিয়াউল। কখনও বলছেন আমার ফোনের কল রেকর্ড-মেসেজ পেতে চাই। যা এ মামলার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এছাড়া তার মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি। তাহলে তিনি এসব পেতে হলে ভিন্ন ফোরামে যাবেন। অথচ যেকোনো কিছুর জন্য তিনি ট্রাইবুনালের কাছে আসছেন, যা আইনের বিধানের বাইরে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একই কক্ষে নিজের আইনজীবীর উপস্থিত থাকা নিয়ে আরেকটি আবেদন করেছেন।
এ আইন নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনে আইনজীবীকে বসে থাকার কোনো বিধানই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে নেই। কিন্তু স্বচ্ছতার স্বার্থে একজন আইনজীবীকে আসামিকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন পার্শ্ববর্তী কোনো কক্ষে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিয়ে থাকেন এই আদালত। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই নিয়মটি মানা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রয়োজন হলে আসামির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন আইনজীবী। পাশাপাশি একজন ডাক্তারকেও রাখা হয় যেন অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসা দেওয়া যায়। আইনে না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এসব করেন আদালত। কিন্তু উনি (আইনজীবী) বলতে চাচ্ছেন জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামির পাশে বসে থাকবেন, যা বাস্তবসম্মত নয়।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আইনজীবী হলেও সম্পর্কে আসামির বোন হন তিনি (নাজনীন নাহার)। এখানে জিয়াউলকে জিজ্ঞাসাবাদের মূল উদ্দেশ্যই তথ্য উদ্ঘাটন করা। তবে তার আইনজীবী পাশে থাকলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। সেজন্য তদন্ত সংস্থা বলেছে তার সামনে বা মুখোমুখি রাখতে পারবেন না। এছাড়া তিনি (আইনজীবী) আরও কিছু বিষয় উত্থাপন করেছেন। অর্থাৎ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কে উপস্থিত থাকবে কে থাকবে না। আমরা খুব সুস্পষ্টভাবে দেখিয়েছি যে জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকেই পাশে রাখতে পারবেন। অনেক সময় আসামিদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য ভুক্তভোগীদের মুখোমুখি করা হয়, যেন সত্য বলতে বাধ্য হন আসামি।
তদন্তকাজকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তাজুল বলেন, সবসময় সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করেন তিনি। তদন্তের কাজগুলোকে বিঘ্নিত করতে আননেসেসারি অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে কোর্টের সময় নষ্ট করার চেষ্টা করেন। এসব বিষয় আমরা আদালতে তুলে ধরেছি যে এগুলো বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল। একইসঙ্গে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে যেসব প্রমাণ এসেছে তাও জানিয়েছি। কারণ একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সুতরাং এসব বিষয় যতটুকু সম্ভব সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে আইন অনুযায়ী যেন তদন্ত সংস্থা ভোগ করতে পারে সেটা আমরা আদালতকে বলেছি।
আমার বার্তা/এমই
