তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ঠেকাতে বিভিন্ন মিথ্যাচার চলছে
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালি ও কার্যকর করতে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের এই উদ্যোগ ঠেকাতে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর পাশাপাশি মিথ্যাচার করছে তামাক কোম্পানি।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর ট্যোবাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ঠেকাতে কোম্পানির প্রোপাগান্ডা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এ অভিযোগ করেন।
ওয়েবমিনারে মূল প্রবন্ধে বিএনটিটিপি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, তামাক কোম্পানি সরকারকে বলে, আইন সংশোধন করলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে, অবৈধ সিগারেট বৃদ্ধি পাবে, বহু লোক তাদের কর্ম হারাবে। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো সত্যতা নেই।
তিনি বলেন, গত একুশ বছরে তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ গুণ এবং প্রতি বছরের রাজস্ব আয় বেড়েছে। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বা ২০১৩ সালে আইন সংশোধনের পরও এসব বছরগুলোতে রাজস্ব বৃদ্ধির ধারা অব্যহত ছিল। অন্যদিকে এনবিআরের আটককৃত শীর্ষ ১০ পণ্যের তালিকায় সিগারেট নেই। গবেষণা সংস্থা আর্ক ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে অবৈধ সিগারেটের বাজার মাত্র ৫.৪ শতাংশ।
তিনি বলেন, দেশে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রেতাদের মাত্র ২.৪ শতাংশ ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা শুধু তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করে, সারাদেশে এই সংখ্যা মাত্র ৬৩ হাজার। আর দেশের মোট বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মাত্র ১৮.৫ শতাংশ বিক্রিয়কেন্দ্র অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করে। তামাকজাত দ্রব্য তাদের পণ্যের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। তাই ১৫ লাখ লোক কাজ হারানোর যে গল্প তামাক কোম্পানি বলে তা নির্ভেজাল মিথ্যাচার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ দীর্ঘদিন থেকে চলছে। কিন্তু তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ, প্রোপাগান্ডার কারণে সেটা বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেজ্ঞ ও সুশীল সমাজের পক্ষে আমাদের আহ্বান হলো সরকার যেন দ্রুত আইনটি সংশোধন করে আইনের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে আরও শক্তিশালী করে। একই সঙ্গে তামাক কোম্পানির মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকসের ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, তামাক কোম্পানি একেক সময় একেক মিথ্যাচার ও মিথকে টার্গেট করে। সম্প্রতি দেখেছি তারা অবৈধ ব্যবসা নিয়েও খুব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তারা এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও এ বিষয়ে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এ বিষয়ে যতগুলো গবেষণা দেশে হয়েছে কোনোটাতেই এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তারপরও ব্যবসা বৃদ্ধি ও নীতিতে হস্তক্ষেপের জন্য চেরাচালান তত্ত্ব নিয়ে হাজির হচ্ছে। ফলে সরকারের উচিত তামাক কোম্পানির মিথ্যাচারে কর্ণপাত না করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সুশান্ত সিনহা বলেন, বাজেট ঘোষণার কয়েক মাস আগে গণমাধ্যমে অবৈধ সিগারেট উদ্ধারের খবর আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিশ্বে যেসব দেশে সিগারেটের দাম সবচেয় কম তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সিগারেটের দাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বেশি দামের দেশ থেকে কম দামের দেশে সিগারেট চেরাচালান হয়ে আসবে এই যুক্তি টেকে না। বরং দেশের প্রায় সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে বড় তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়মিত সংযোগ রয়েছে। ফলে সব বিক্রিয়কেন্দ্রে তাদের নজরদারি ও পর্যবেক্ষণে থাকায় নকল সিগারেট বিক্রির প্রপাগান্ডা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনটিটিপি’র সিনিয়র প্রজেক্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান।
আমার বার্তা/এল/এমই
