পিছিয়ে থাকা নারীদের নিয়ে স্বপ্ন বুনেন নাদিরা
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
তকীউদ্দিন মুহাম্মদ আকরামুল্লাহ:
সিলেটি কন্যা নাদিরা আবুল কোরেশী। শৈশব থেকেই আঁকাআঁকি ও নকশা করার শখ তার। শখের কাজ দিয়েই দূরন্তপনা কৈশোরে তিনবার ঝাঁপিতে মেলে তার জাতীয় পুরস্কার। কলেজের গন্ডি শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য দূর আমেরিকায় পাড়ি জমান সেই নাদিরা। উচ্চশিক্ষা শেষে সেখানেই কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আরেক সিলেটি সন্তান রাশেদ ওয়াহিদ এর সাথে। রাশেদ ওয়াহিদ ছিলেন কানাডা প্রবাসী। বিয়ের পর তিনিও আমেরিকায় চলে আসেন। নাদিরা ও স্বামী রাশেদ দু'জনেই আমেরিকায় ভিন্ন দুইটি আইটি ফার্মে কর্মরত। এক পুত্র সন্তান নিয়ে সুখের সংসার তাদের। নাদিরা আমেরিকায় বসবাস করলেও হৃদয়ে লালন করেন নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশকে। ভালোবাসেন মাতৃভূমির মানুষদেরও।
বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার এবং বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা মানুষদের কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার, তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্বশালী করার, তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার ও শিল্প চর্চায় সম্পৃক্ত করার আকাঙ্খা জন্মায় তার মনে। আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে ছোট্ট বেলার শখ আঁকাআঁকি আর নকশা নিয়েই পরিকল্পনা আঁকেন তিনি।
সিলেট নগর থেকে বেশ দূরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের কানিশাইল গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারী ও কন্যাদের সংঘবদ্ধ করে তাদেরকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। তিনি তাদের মনে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগায়। তাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আবুল হোসেন কোরেশী প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এ মানুষদের কাপড় বুনা, কাপড়ে নকশা করা, বুটিক করা, শাড়ি-থ্রিপিস তৈরী ইত্যাদি বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদেরকে আরও পাকাপোক্ত করে তোলেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের জন্য কারখানা গড়েন কানিশাইল এর পাহাড়ি অরণ্যে।
তিনি স্বপ্ন দেখেন এই মানুষগুলোকে নিয়ে বিশাল একটি উদ্যোক্তা পরিবার গড়ার। নাদিরা তাদের মনের মাধুরি দিয়ে তৈরী পণ্যগুলো বাজারজাত করতে শাটী নামে একটি ব্র্যান্ডও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। শাটীর মাধ্যমে বাঙালিয়ানা এই পণ্যগুলো দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে শোভা ছড়ায়। এতে করে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিশ্বময় মর্যাদা লাভ করে। এটাও নাদিরার অন্যতম লক্ষ্য। আর এ থেকে আয়কৃত সম্পূর্ণ অর্থও এই নারী ও কন্যাদের ফেরত দেয় নাদিরা কোরেশী।
শুধু তাই নয়, এই সকল পরিবারের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজ মুখী করার জন্য নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকেন নাদিরা। তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তাদেরকে কম্পিউটার ও আইটির উপরও দক্ষ করে তোলেন। তাদেরকে সংস্কৃতি বান্ধব ও ক্রীড়ামোদী করে গড়ে তোলার জন্যও করে নানা আয়োজন। গত ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী তেমনি একটি আয়োজন হয় পাহাড়ের পাদদেশ এ কানিশাইল গ্রামে। এখানে সুবিধাবঞ্চিত এ মানুষদের জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে নাদিরা কোরেশী।
উৎসবে দুই দিন ব্যাপি চলছিল দেশীয় সব খেলার প্রতিযোগিতা, নাচ-গাণ-আবৃত্তি, রং মাখা, ভোজনবিলাস ও ফুচকা, চটকপটি, পিঠাপুলির বিশাল আয়োজন। নাদিরার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও অংশ নেয় এই উৎসবে। সবাই মিলেমিশে এই আনন্দ উপভোগ করে। নাদিরাই পুরো উৎসব আয়োজনটির পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন। ঈদকে সাম্যের উৎসব বলা হলেও এ দেশে ঈদে বৈষম্য ই বেশী হয়। কিন্তু নাদিরার আয়োজনকৃত এই আনন্দ উৎসব সত্যিই সাম্যের উৎসব হয়ে উঠেছিল। এই সাম্যতাই তার বিশাল উদ্যোক্তা পরিবার গড়ার অন্তহীন পথযাত্রার শক্তি হবে।
আমার বার্তা/এমই