বাস ভাড়া কমানোর নামে শ্রেষ্ঠ তামাশা করলো সরকার

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

দেশে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২ টাকা ২৫ পয়সা কমায় গণপরিবহন বিশেষ করে বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ যাত্রী প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ১২ পয়সা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। এই ভাড়া কার্যকর হয় মঙ্গলবার থেকে। এতে প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া কমেছে মাত্র ৩ পয়সা। তবে বাস মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া যথাক্রমে ১০ ও ৮ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।


তবে কমানো ৩ পয়সা নিয়ে বড় বিড়ম্বনায় যাত্রী ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। এতে প্রাচীন মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন পয়সার প্রভাব বাসের ভাড়ায় খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কোথায়? হিসেব করলে একজন যাত্রী ২০ কিলোমিটার ভ্রমণ করলে আগের দামের থেকে কমবে মাত্র ৬০ পয়সা । কিন্তু এই পয়সা টাকার অঙ্কে সমন্বয় করা সম্ভব নয়। এতে বাকবিতণ্ডার প্রভাব ক্রমশ বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

যাত্রীরা বলছেন, ২০ কিলোমিটারে ৬০ পয়সা হলে একটা টাকাও কম দেওয়া সুযোগ নেই তাদের। ফলে দাম কমানো নাটক তাদের কাছে বিরক্তির কারণ। নির্বাচনের পর সরকার ও কর্তৃপক্ষের প্রথম ব্যর্থতা বাসের ও জ্বালানি তেলের দাম কমানো। এভাবে জনগণের সাথে তামাশা করছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

সাগর আলী নামের এক যাত্রী বলেন, আমরা যা দেখি তা হয়ত সরকার বা কর্তৃপক্ষ দেখেন না। তাই হয়ত আমাদের সাথে তামাশা করেন। তেলের দাম যখন বাড়ানো হলো এক সাথে ৫০ টাকা বাড়ালো। কিন্তু কমানোর সময় কমালো কয়েক পয়সা। ঈদের আগে তামাশার কিছু ছিল না বলেই বাসের ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিলো আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তামাশা টা করল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আরিফ বলেন, মূলত ভাড়া কমলে আমাদের একটা স্বস্তি আসবে। আমাদের অনুভূতি নিয়ে কতটা খেলেছে কর্তৃপক্ষ। ৩ পয়সা যদি কমাতে হয় বাসে পয়সার টোকেন করার দাবি জানাই। হয়ত এভাবে শত বছরে হাজার টাকা জমাতে পারব।

অরিন ট্রাভেলের যাত্রী আফসানা মিনি বলেন, বাসায় যেতে আমার আগে প্রয়োজন হতো ৮০০ টাকা এখন লাগবে ৭৮০ বা এর একটু কম। এটা কমানোর কোন মানে আছে। বকশিশ হিসেবে তাদের দিতে চাই। এই ভাড়া যারা নির্ধারণ করেছেন  তারা তামাশা করেছেন। যদি পয়সা কমাতে হয় মুদ্রা চালু করেন চার আনার।

এদিকে বেশিরভাগ গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ জানেন না ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত কিংবা প্রজ্ঞাপন বিষয়ে। এতে বাকবিতণ্ডার পাশাপাশি ভাড়া সমন্বয়ে বড় বিপাকে বাস শ্রমিকরা।

গাবতলী থেকে টাঙাইল রুটের মাইশা পরিবহনের সুপারভাইজার বলেন, আজ প্রায় ৫ জনের সাথে বাকবিতণ্ডার জড়িয়েছি। সরকার কমিয়েছে ৩ পয়সা এর হিসেব ছাড়াই ১০ টাকা ৫ টাকা কম দিচ্ছে। এমন হলে তো সমন্বয় সম্ভব নয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করেন, বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতেই যাত্রীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বাসের ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে কোনো সুফলই পাবে না যাত্রীরা। তবে তেলের দাম কমানোর সুফল পাওয়া যাবে।

তবে কম দূরত্বের পথে ভাড়া কমার সুফল মেলা কঠিন। দূরপাল্লার যাত্রীদের ক্ষেত্রে বাসের ভাড়া কিছুটা কমবে বলে মনে করেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। নতুন ভাড়ার তালিকা দু-এক দিনের মধ্যে বাসে দিয়ে দেওয়া হবে। তখন যাত্রীরা তালিকা দেখে ভাড়া দিতে পারবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ, ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলের মূল্য কমায় বাসের ভাড়া তিন পয়সা কমানো হয়। ২০২২ সালে বাসের ভাড়া পাঁচ পয়সা কমেছিল। এর আগে ২০১১ সালেও বাসের ভাড়া দুই পয়সা কমিয়েছিল সরকার। তবে এসব দাম কখনোই প্রভাব রাখেনি সাধারণ মানুষের অর্থনীতি সঞ্চয়ে। অথচ শেষ এক দশকে দাম বৃদ্ধিতেই প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা পকেট কাটা পড়েছে সাধারণ মানুষের।


আমার বার্তা/জেএইচ