সব মিথ্যা প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ২০:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত : ছবি পিআইডি

দল-মত নির্বিশেষে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সব মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে তার প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডের তথ্য ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৃতীয় পর্যায়ের কল্যাণ অনুদান/আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, একদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গণমাধ্যমকে বিস্তৃত করবেন, তার পরিসর বাড়াবেন, গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থা করবেন, অন্যদিকে একটা গোষ্ঠী তার বিপক্ষে গণমাধ্যমে অসত্য কথা বলে যাবেন, এটা হতে পারে না। কাজেই আমি অনুরোধ জানাবো দল-মত নির্বিশেষে গণমাধ্যমের সাংবাদিক বন্ধুরা সব মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ করুন। আপনারা অপপ্রচারের বিপক্ষে সবাই রুখে দাঁড়ান, সত্যের পক্ষে থাকুন। অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা-বিচ্যুতির সমালোচনা করবেন। এটা সরকার স্বাগত জানাবে। কিন্তু মিথ্যাচারের মাধ্যমে সমালোচনা করলে সেটা মেনে নেয়া হবে না, সত্য তুলে ধরে জবাব দেয়া হবে।

প্রতিপ্রন্ত্রী আরও বলেন, এ দেশে মিথ্যা বলারও স্বাধীনতা আছে। যখন-তখন যেভাবে ইচ্ছা সারাক্ষণ মিথ্যা বলারও স্বাধীনতা এ দেশে আছে। গত কিছুদিন ধরে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়েছেন, সমঝোতা স্মারক করে এসেছেন, চুক্তি করে এসেছেন যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের ট্রেন যাবে, বাংলাদেশকে বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন, এ ট্রেন দিয়ে গোলাবারুদ যাবে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে ভারতের অপর প্রান্তে এবং বাংলাদেশ একটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। বিরোধীদলের কিছু নেতারা টকশোতে এসব কথা বলেছেন। অথচ এই সমঝোতা স্মারকে আছে ভারতের ওপর দিয়েও বাংলাদেশের ট্রেন চলবে এবং বাংলাদেশের ট্রেন ভারতের ওপর দিয়ে চলে নেপাল-ভুটানে যাবে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আমাদের ৫০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আছে। এ সত্য কথা কেউ বলে না। সমঝোতা স্মারকে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে বাংলাদেশে আমদানি করে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। যেটা বাংলাদেশের মানুষ ব্যবহার করবে।

সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারতের বুক চিরে শুধু বাংলাদেশের ট্রেনই চলবে না, ভারতের আকাশ চিরে বিদ্যুৎও আসবে বাংলাদেশে। গণমাধ্যম এই হেডলাইন কেনো করলো না- এ সময় প্রশ্ন রাখেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের ট্রেন চলবে এই সমঝোতা স্মারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন এটা সত্যি। কিন্তু এটা অর্ধেকটা সত্য। পুরো সত্য হচ্ছে, ভারতের ওপর দিয়েও বাংলাদেশের ট্রেন চলবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতাই নয়, মিথ্যা বলারও স্বাধীনতা আছে। সরকারের কোন একটা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক বা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার অধিকার যে কারো আছে। কিন্তু মিথ্যা বলে কেনো বিরোধিতা করতে হবে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে কেনো বিরোধিতা করতে হবে? এতে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়, এটা অপরাধ। অথচ বর্তমান সরকারের বিপক্ষে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলে বিভিন্ন অপপ্রচার করা হয়।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাংবাদিক সমাজের যেমন নিবিড় সম্পর্ক ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে একইভাবে এক ধরনের নিবিড় সম্পর্ক সব সময়ই ছিল। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিক সমাজ এবং তাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে সাংবাদিক সমাজের পাশে এবং গণমাধ্যমের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য তার চিন্তাভাবনা খুবই ইতিবাচক। যে কারণে কল্যাণ ট্রাস্টের মতো এরকম একটি উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এই উদ্যোগ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য খুবই সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এবং তার সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এগুলো নিয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সমালোচনা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাংবাদিকদের কল্যাণে, গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো খুব বেশি শোনা যায় না। এগুলো নিয়ে বড় আকারে রিপোর্টও আসে না। এগুলো দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জায়গায় বলা দরকার।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত পনেরো বছরে গণমাধ্যমের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা গণমাধ্যমবান্ধব বলেই তিনি গণমাধ্যমের বিস্তৃতির শুধু সুযোগ করে দেননি, গণমাধ্যমকে বিস্তৃত হওয়ার জন্য প্রনোদনা দিয়েছেন, পরিবেশ তৈরি করেছেন। গণমাধ্যমে যারা কাজ করছেন তাদের কল্যাণের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। এ ইতিবাচক বিষয়গুলো আমরা খুব একটা তুলে ধরতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন এবং এই কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে দল মত নির্বিশেষে সত্যিকার অর্থে দুস্থ সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর যে প্রচেষ্টা, সেটিই প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যমবান্ধব সরকার। কাজেই যারা আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের বিপক্ষে অপপ্রচার করার চেষ্টা করে, এই তথ্যগুলো তুলে ধরে তাদের অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরো যোগ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারাদেশে ৭৮৪ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের মাঝে ৬ কোটি ১৫ লক্ষ ৫০ টাকা কল্যাণ অনুদান প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ পুরো বাংলাদেশে ২৯৩ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের মাঝে ২ কোটি ২২ লাখ টাকা অনু্দান দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ও তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া এবং ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৃতীয় পর্যায়ে ২৯৪ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের অনুকূলে বিতরণের জন্য ২ কোটি ২২ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট হতে দুস্থ, অস্বচ্ছল, দুর্ঘটনায় আহত ৩ হাজার ৯৪১ জন সাংবাদিক এবং মৃত সাংবাদিকদের পরিবারের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা/কল্যাণ অনুদান বাবদ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।


আমার বার্তা/এমই