নার্সদের ১ দফা দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

মহাপরিচালকের বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তাল স্বাস্থ্য খাত, কর্মবিরতির হুমকি"

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে নার্সিংকে আন্তর্জাতিক মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে নার্সদের সঙ্গে প্রশাসনিক দ্বন্দ্বের ফলে দেশজুড়ে আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর নার্সদের পেশাকে হেয় করে বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নার্সদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদানকে 'ভুল' বলে উল্লেখ করেন। এর প্রেক্ষিতে নার্স সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে, যা ৯ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলনে রূপ নেয়।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তারা তাদের এক দফা দাবি পূরণের জন্য কঠোর হুশিয়ারি দেন। তাদের একমাত্র দাবি হচ্ছে—নার্সিং অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদে উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্সদের নিয়োগ দিতে হবে।

আন্দোলনকারী নার্সরা জানায়, পূর্বে এই দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও ১২ সেপ্টেম্বর পুনরায় একজন নন-নার্স প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার পদে পদায়ন করা হয়েছে, যা নার্সদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজ ১৪ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নার্সরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে। নার্সদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রয়োজনে তারা কর্মবিরতির মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।

এই আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বিশেষ করে নার্সদের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হতে পারে, যা দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যখাতের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় দেখে আনতে পারে।

নার্সদের পেশাগত ভূমিকা ও প্রশাসনিক বঞ্চনা:

নার্সিং পেশা দেশের স্বাস্থ্যখাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। করোনা মহামারি, শতভাগ টিকা প্রদান কর্মসূচি, ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে নার্সদের নিরলস ভূমিকা জাতি দেখেছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের সেবায়ও নার্সরা সামনে থেকে নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে, নার্সরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার বলে দাবি করছেন। ১৯৭৭ সালে নার্সিং পেশাকে পৃথক সেবা পরিদপ্তরের মাধ্যমে স্বতন্ত্র স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে নার্সদের পেশাগত অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ২০১৬ সালে সেবা পরিদপ্তরকে উন্নীত করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর গঠন করা হয়। তবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নার্সদের পরিবর্তে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদায়নের অভিযোগ উঠেছে, যা নার্সদের পেশাগত মর্যাদা ও সেবার মানে বাধা সৃষ্টি করছে।

নার্সরা দাবি করছেন, এই ধরনের পদায়ন তাদের পেশাগত মান ও অভিজ্ঞতার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন এবং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চরম প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে।


আমার বার্তা/জেএইচ