শুধু ভোটের অধিকারের জন্য গণ-অভ্যুত্থান হয়নি: হাসনাত আবদুল্লাহ

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

শুধু ভোটের অধিকারের জন্য গণ-অভ্যুত্থান হয়নি উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার দাবির মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদের বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে বেনার নিউজ বাংলা আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, লেখক–গবেষক মোবাশ্বার হাসান, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম, অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ প্রমুখ। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বেনার নিউজ বাংলার প্রধান শরীফুজ্জামান। সভা সঞ্চালনা করেন বেনার নিউজের সিনিয়র কনটেন্ট ম্যানেজার আশীফ এন্তাজ রবি।

বিগত সরকারের সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, তাদের যখন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে যে বক্তব্য তারা দিয়েছিলেন, তা গণমাধ্যম প্রচার করেনি; বরং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবে প্রচার করা হয়েছে।

২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, গণভবনমুখী হইয়েন না, জনগণমুখী হন। মনে রাখবেন সরকার যেটা শুনতে চায় সেটা প্রেস রিলিজ (বিজ্ঞপ্তি)। আর সরকার যেটা শুনতে চায় না, সেটা নিউজ।

আওয়ামী লীগ ফিরবে কি, ফিরবে না সে আলোচনার সময় এখনো আসেনি উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত যারা তাদের পুনর্বাসন নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন, তারা কখনো গণ-অভ্যুত্থানকে হৃদয়ে ধারণ করেননি। আগে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা প্রাসঙ্গিক। আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে কি নেবে না তা অপ্রাসঙ্গিক।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করছেন, তাদের একটি বিষয় মনে রাখার জন্য বলেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ব্যাক ডোর (পেছনের দরজা) দিয়ে সেটেলমেন্টে (সমঝোতা) যাবেন...আপনারা যদি মনে করেন, ব্যাক ডোর চ্যানেল দিয়ে সমঝোতা করবেন, তাদের ব্যবসার অংশ হবেন, তাহলে মনে রাখবেন উই আর অলরেডি (আমরা ইতিমধ্যে) শহীদ। পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। যে রাজনৈতিক দলগুলো এ চিন্তা করছেন আপনারা আমাদের ভুলে যাবেন না।

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মহাখালীতে নিহত জাহিদ হোসেনের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বক্তব্যের শেষের দিকে বলেন, তিনি দেশের জন্য এক ছেলেকে দিয়েছেন। প্রয়োজনে আরেক ছেলেকেও দেবেন। লাগলে বাবা হিসেবে তিনিও যাবেন। সেই কথার সূত্র ধরে হাসনাত বলেন, বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো আপনারা সমঝোতার রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে যাচ্ছেন। এই বাবার কথা নোট করে রাখবেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। যারা পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন, তাদেরও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

হাসনাত আরও বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো রেখে পরবর্তী সময়ে যতই নির্বাচন দেওয়া হোক না কেন, সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। মূল সংস্কারগুলো আগে হতে হবে। সেই সংস্কারই দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। নির্বাচন ও সংস্কার যুগপৎভাবে চলবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনের বক্তব্যের সূত্র ধরে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এখন বলা হচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংস্কারের মূল প্রবক্তা; কিন্তু ২৮ অক্টোবর (২০২৩) কিন্তু সফল হতে দেখা যায়নি। সেখানে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ অংশ নেয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি মহাসমাবেশের ডাক দেয়। পুলিশের বাধায় সেই মহাসমাবেশ পণ্ড হয়। সেদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশসহ দুজন নিহত হন। পরে আওয়ামী লীগ গত ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসলেও জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তাদের পতন হয়। বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার ও দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করছেন। অন্যদিকে বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারের পক্ষে, তবে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন ও নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।


আমার বার্তা/জেএইচ