তত্ত্বাবধায়ক নয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে আগামী নির্বাচন

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক:

তত্ত্বাবধায়ক নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত ও আদালতের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এসেছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে রিপ্লেস হবে না এবং আগামী নির্বাচন এই সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক  আয়োজিত 'সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিবেদন পেশ: তারপর কী?' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সুজন সম্পাদক।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এসেছে। এখন বাকি বিষয়গুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা রিপ্লেস হবে না। আমাদের আগামী নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই হবে। আর এই নির্বাচনে কোনো ইভিএম ব্যবহার হবে না। বরং যারা এটার উদ্যোগ নিয়েছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।

সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো কিছু দিনের মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দেবে। আমরা নানা অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেব। এখন প্রশ্নের বিষয় এরপর কী হবে? আপনারা জানেন প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে সাড়া দিয়েছে। এ বাস্তবতায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যমতের একটি কমিটি গঠিত হবে।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এতগুলো প্রাণহানি ও আত্মত্যাগের দুইটি কারণ ছিল। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা। আরেকটি দাবি ছিল, আর কোনোদিন বাংলাদেশে যেন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরে না আসে। এজন্য সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু কেউ কেউ বলছে, সংস্কার পরে হলেও হবে। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মৌলিক সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছিল। এ বিষয়ে জনমতকে জনসচেতনতায় পরিণত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন


স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা সুপারিশ গ্রহণ করছি। এর আগে ২০০৭ সালে একটি কমিশন হয়েছে। সেই কমিটির সুপারিশগুলোকেও বর্তমান কমিশন বিবেচনা করছে। সে সময় ওইগুলো বাস্তবায়ন না হলেও আমরা এবার তা করার জন্য কাজ করছি।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, এমপি থেকে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করবেন না। এমপিদের সবকিছুতে হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখা যাবে না। আমাদের রাষ্ট্রীয় শাসন সংসদীয় পদ্ধতি কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগে শাসন রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির। এটি সংসদীয় পদ্ধতিতে নিয়ে আসতে হবে। সরাসরি চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত হবে না। তিনি মেম্বার ও কাউন্সিলের মাধ্যকে সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু আমাদের কাউন্সিলরদের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটির উন্নয়ন জরুরি। একইসঙ্গে মাথা কেনার বিষয় রয়েছে।

এ সময় তিনি স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

সাবেক সচিব আব্দুল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানে না থাকলেও জর্জ ওয়াশিংটনের পথ অনুসরণ করে কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়নি। অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা থাকলে আইন ছাড়াও সুশাসন সম্ভব। আর সদিচ্ছা না থাকলে আইন-সংস্কার কোনো কিছুই কাজে আসবে না। তার প্রমাণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে প্রথম দিকে ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, ড. আলী রিয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন, আবুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচারপতি আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন এবং সফর রাজ হোসেনকে প্রধান করে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই ৬টি সংস্কার কমিশন ৩১ ডিসেম্বরে মধ্যেই সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, কামাল আহমেদকে প্রধান করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহাম্মদকে প্রধান করে শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং ড. তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই ৫টি সংস্কার কমিশন পরবর্তীতে প্রতিবেদন পেশ করবে। প্রতিবেদনে কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে তা নিয়ে যেমন জনমনে আগ্রহ রয়েছে, তেমনই প্রতিবেদন পেশের পর কী হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে সম্পর্কেও মানুষ জানতে চায়।


আমার বার্তা/এমই