গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী অনেকের মেন্টাল ডিসঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:০৩ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
![](/assets/news_photos/2025/02/12/image-42371-1739358255.jpg)
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক চাপ তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রংপুরে আবু সাঈদের সঙ্গে যারা মিছিল ও সমাবেশ এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেকের মধ্যে মেন্টাল ডিসঅর্ডার (মানসিক ভারসাম্যহীন) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের ট্রমা থেরাপিসহ যথাযথ ট্রিটমেন্ট সহায়তা দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের পিআইসি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ইউজিসি অডিটোরিয়ামে এ সভার আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থী হাত-পা, চোখ হারিয়েছেন। তাদের অঙ্গহানি ঘটেছে। এসব শিক্ষার্থী তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ জনগোষ্ঠীর ট্রমা মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার, অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তাবাসসুম আমিনা, ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম, পরিচালক মোছা. জেসমিন পারভীন, ছাত্র সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম ও উমামা ফাতেমা, ইউনেসকোর প্রোগ্রাম অফিসার রাজু দাস প্রমুখ।
সভায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন যাচাই করে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা এবং চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা ভয়ংকর ট্রমার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ অবস্থা থেকে বের করে আনতে হলে কাউন্সেলিং সেবা অতীব জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভালো রাখা এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করা গেলে এ সংকট দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আন্দোলনের পরে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু কাজ হয়েছিল। তবে সরকারি সহায়তায় মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে তেমন কাজ হয়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা দেওয়া হলেও আন্দোলনের কিছু দিনের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ট্রমার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি।
সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিতে সম্ভব হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসব প্রতিষ্ঠানের অগণিত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলেও জানা তিনি।
ইউজিসি জানায়, প্রকল্পের কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার শিকার দেশের ২২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষায় তাদের পূর্ণ মনোনিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ।
আমার বার্তা/এমই